ইয়াবার মামলায় বিচারিক আদালতে পাঁচ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে বৃদ্ধ মায়ের সেবা এবং সন্তানের লেখাপড়া করানোর শর্তে জেলে না পাঠিয়ে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট।
রোববার বিচারপতি জাফর আহমেদের একক বেঞ্চ ব্যতিক্রমী এ রায় দেন।
রায়ে বিচারক বলেন, ছোট দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানো, বৃদ্ধ মায়ের সেবা এবং মেয়েকে বাল্য বিয়ে না দেওয়ার শর্ত দিয়ে মতিকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে। শর্ত ভাঙ্গলে তার প্রবেশন বাতিল হবে।
সমাজসেবা অধিদফতরের ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদের তত্ত্বাবধানে দেড় বছর প্রবেশনে থাকবেন মতি।
আদালতে মতির পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এনামুল হক মোল্লা।
আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি মতি মাতবর পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশনে দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রবেশন আইনে হাই কোর্টের দ্বিতীয় রায় এবং বিশেষ আইনে প্রথম রায়।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৪১১টি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর মতি মাতবরসহ দুই জনকে আসামি করে ঢাকা কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়।
মামলার পর মতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে দুই দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। এ মামলায় তদন্ত শেষে ওই বছরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
২০১৬ সালের ২৯ মার্চ ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩ মতিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয় আদালত।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা মহানগর দায়রা আদালতে আপিল করে। মহানগর দায়রা আদালত-৭ আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখে।
রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন মতি। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ৯ জুলাই জামিন দেয়। ২০ মাস পর মতি ছাড়া পান।
এদিকে হাই কোর্টে মামলাটির মূল শুনানি শুরু হয়। আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, ‘মামলাটিতে প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ৫ ধারা অনুযায়ী আদেশ দেয়া যেতে পারে। মতির আর কোনো অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন। তা ছাড়া ওই মামলায় তিনি ২০ মাস কারাগারে ছিলেন।’
আদালত মতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে নির্দেশ দেন। পরে আদালত অ্যান্টিসিডেন্ট রিপোর্ট প্রদানের জন্য আরেকটি আদেশ দেয়।
২ নভেম্বর আদালতে অ্যান্টিসিডেন্ট রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। ওই রিপোর্টে আসামি সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আদালত তাকে প্রবেশনে দেয়।