বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সদরঘাট কত দূর?

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২০ ১১:১০

গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে দক্ষিণের লঞ্চযাত্রী, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। বাইকে করে পাড়ি দিতে লাগল দেড় ঘণ্টা। একই সময়ে রিকশা যায় অর্ধেক পথ মাত্র।

বুধবার বিকাল চারটা। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যাত্রা। সঙ্গে রাজধানীর ‘সবচেয়ে দ্রুততম বাহন’ মোটর সাইকেল। তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বেলা সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছানো গেল সদরঘাট।

রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের প্রধান পথ সদরঘাট যাওয়া কতটা বন্ধুর তা বোঝা যায় এই অভিজ্ঞতা থেকে। বাইকেই যেখানে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখানে অন্য বাহনে কত সময় লাগে সেটা সহজবোধ্য।

আর এই পথে তীব্র যানজটের কারণে কত মানুষ প্রতিদিন তার কাঙ্ক্ষিত লঞ্চ ধরতে পারে না তার কোনো হিসেব নেই।

গত দুই বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর সদরঘাটের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর আগে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, হকারদের দৌরাত্ম ও কুলিদের হয়রানিসহ পদে পদে ভোগান্তির যে চেনা রূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সদরঘাটের, তা এখন আর নেই।

কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে গুলিস্তান থেকে ঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দৈনিকের যে দুর্ভোগ, তার থেকে যাত্রীদের এখনো নিস্তার মেলেনি। ফলে ঘাট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তার পুরো সুফল এখন পর্যন্ত পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার থেকে সদরঘাটগামী যানবাহনের লাইন। ছবি: সাইফুল ইসলাম

 

ঢাকার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের বাড়ি বরিশাল। থাকেন রাজধানীর পান্থপথে। নদীপথের যাত্রা স্বস্তি ও আরামদায়ক হওয়ায় তিনি লঞ্চে চড়েই বাড়ি যান। তবে প্রতিবার ঘাট পর্যন্ত যেতেই যাত্রার আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।

নিউজবাংলাকে তৌহিদুল বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে যে যানজটের শুরু, তা দিন দিন বাড়ছেই। এ কারণে একবার লঞ্চ মিসের ঘটনাও ঘটেছে। বাড়ি থেকে ফেরার পথেও একই রকম দুর্ভোগ। ঢাকা পৌঁছানো পর্যন্ত ক্লান্তি লাগে না। কিন্তু এরপর আর শরীরে দিতে চায় না।’

ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে যানজটে পড়া গাড়ির লম্বা লাইন। ছবি: সাইফুল ইসলাম

 

বাইকে দেড় ঘণ্টা, অন্য বাহনে কত সময়?

যাত্রাপথ বেশ মসৃণই। মানে রাস্তা ভাঙাচোরা নয়। কিন্তু রিকশা, ঠেলাগারি, বাস, ট্রাক, হিউম্যান হলার, ভ্যান, প্রাইভেট কারে ঠাসা এই পথ ধরে চলতে গেলে কতটা কষ্ট সেটা ভুক্তভোগীরাই বোঝেন।

জিরোপয়েন্ট থেকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক, ইংলিশ রোড ও জনসন রোড হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের একটু বেশি পথ পাড়ি দিতে সময় লাগল ৫০ মিনিটের বেশি।

দেখা যায়, গোটা পথের দুই পাশেই নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব মার্কেট ও দোকানের মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও লরিসহ নানা ধরনের যানবাহন সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা থাকে দিনভর। ফলে সড়কের দুই পাশই সংকুচিত।

এই পথে কতবার যে ব্রেক কষতে হলো, তার হিসেব নেই। পথে পথে মানুষের ঝগড়াঝাটি, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কার দৃশ্য দেখতে দেখতে আগাতে হলো।

ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে সদরঘাট বলতে গেলে চোখে দেখা দূরত্ব। কিন্তু পার্কের কাছাকাছি যেতেই পুরোপুরি স্থবির সব।

বাস, প্রাইভেট গাড়ি, অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলের মতো যন্ত্রচালিত যানবাহনের পাশাপাশি গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেল ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, পায়ে চালানো রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ির মতো অযান্ত্রিক যানগুলো।

এ সব যানবাহনে আটকে পড়া বহু যাত্রীর গন্তব্য সদরঘাট। কিন্তু আধা ঘণ্টাতেও জট খোলার কোনো লক্ষণ না পেয়ে ব্যাগ-বোচকা কাঁধে নিয়ে হাঁটা ধরলেন কেউ কেউ।

ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

 

খানিক বাদে পথ কিছুটা সচল হলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছে দেখা গেল, লঞ্চ ধরার তাড়ায় মানুষ দৌড়াচ্ছে। সবার মুখেই ক্লান্তি ও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।

অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে সদরঘাট পর্যন্ত যাওয়ার পথটি এক প্রকার আটকে আছে সড়কের দুই পাশ দখল করে রাখা হকারদের কারণে।

এই অংশেই আছে ডিএসসিসির লেডিস পার্ক হকার্স মার্কেট ও বাকল্যান্ড বাঁধ সিটি করপোরেশন মার্কেটসহ একাধিক শপিং মল এবং সুতা-কাপড়ের অন্তত তিনটি পাইকারি মার্কেট।

সব ঝক্কি ছাপিয়ে সদরঘাটের ২ নম্বর টার্মিনাল ভবনে ঢুকে দেখা গেল, ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে পাঁচটার ঘরে।

এ তো গেল বাইকের গল্প। জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাটমুখী বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও করুণ।

এই পথে অন্যদের অভিজ্ঞতা জানতে গুলিস্তান থেকে সদরঘাটগামী একজন রিকশা চালক, একজন অটোরিকশা চালক, ঘোড়াগাড়ির চালক আর এক বাস চালকের ফোন নম্বর নেয়া হয়েছিল।

বাইকে চড়ে সদরঘাট পৌঁছানোর পর জিরো পয়েন্টের রিকশা চালককে কল করলে জানান, তিনি তখনও আটকে আছেন জনসন রোডে।

ঘোড়ার গাড়িটি কিছুক্ষণ আগে পৌঁছেছে লক্ষ্মীবাজার মোড়ে। সেখান থেকে লাগবে আরও বেশ কিছুটা সময়।

বাসচালক মো. শরিফুল জানালেন, ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে তার লেগেছে সোয়া এক ঘণ্টার মতো। কখনও কখনও দুই ঘণ্টাও লাগে।

সমাধান কী?

সদরঘাটে ঢোকার মূল পথ অর্থাৎ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে থাকা মার্কেটগুলো সরিয়ে সড়কটি প্রশস্ত করতে দুই বছর আগে আবেদন করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

 

কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ও মিলব্যারাক হয়ে ঘাটে আসার যে সহজ পথটি আছে, সেটাও যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারেন না শ্যামবাজার এলাকায় সড়কের ওপর অবৈধ দখলদারির জন্য।

ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে জানান, এই নদীবন্দর থেকে মোট ৪২টি পথে লঞ্চ ও স্টিমার ছেড়ে যায়। দিনে যাতায়াত করে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই সংখ্যা আরও বাড়ে।

ঈদের মৌসুমে এই ঘাট দিয়ে একদিনে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াতের রেকর্ড আছে। পাশাপাশি মালামাল বহনকারী বার্জগুলোও সদরঘাটকে মাল ওঠানো-নামানোর কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ঘাটে পৌঁছানোর সড়কগুলো স্থায়ীভাবে যানজটমুক্ত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতেই হবে। কেবল ঘাট ব্যবস্থাপনা বা অবকাঠামোগত উন্নয়নে পুরো সুফল মিলবে না।

এ বিভাগের আরো খবর