নিউরোসায়েন্স সেন্টারের যাত্রার শুরুতে সেরিব্রাল পলসি নামের জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর সফল অপারেশন করেছে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার ছাতীয়ার তলা গ্রামের সুমন নামে এক কিশোর ১৩ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
গত ১ নভেম্বর গণস্বাস্থ্যের নিউরোসায়েন্স সেন্টারে ১২ ঘণ্টাব্যাপী সুমনের অপারেশন করা হয়। ছয় দিন পর তিনি স্বাভাবিকভাবে খাওয়া দাওয়া করছেন। তার সার্বিক শারীরিক অবস্থাও উন্নতির দিকে।
সেরিব্রাল পলসির কী?
প্রসবকালে ও প্রসবপরবর্তীতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে মস্তিস্ক সংকুচিত হলে সেরিব্রাল পলসি রোগ হয়। এ রোগ জন্মের পরই ধরা পড়ে।
পরিবারের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক চলাফেরা জ্ঞানবুদ্ধি ব্যাহত হয়, রোগীর খিচুঁনি হয়, লালা পড়ে, কথা বলতে পারে না, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়, হাত পা শক্ত হয়ে যায়।
অটিজম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট মনিটরিং নেটওয়ার্ক-এর এক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, বিশ্বের প্রতি ৩২৩টি জীবিত শিশুর মধ্যে একজন সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত।
সেরিব্রাল পলসি নামের জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর সফল অপারেশন করেছে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল
আক্রান্ত চার জনের মধ্যে একটি শিশু কথা বলতে পারে না, তিন জনের মধ্যে একজন হাঁটতে পারে না। ৬০ শতাংশ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, ১০ শতাংশ কোনও অবলম্বনের সাহায্যে হাঁটতে পারে, ৩০ শতাংশ হুইলচেয়ার ব্যবহার করে।
দুইজনের মধ্যে একজনের বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা রয়েছে এবং চারজনের মধ্যে একজনের মৃগী রয়েছে।
চিকিৎসা কী
দ্রুত অপারেশনই একমাত্র উপায়। সেক্ষেত্রে মাথার খুলি খুলে, মস্তিস্কের রুদ্ধ আবরণ কেটে বড় করে নতুন কৃত্রিম ডুরাপ্লাস্টি যোগ করে রক্ত সরবরাহ করে মত্বিস্কের আয়তন বাড়াতে পারে।
নিউরোসায়েন্স সেন্টারের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী সুমনের অপারেশনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ক্রেনিওপ্লাস্টি ও ডুরোপ্লাস্টি করে দিলে দ্বিতীয় দিন থেকে বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা প্রকাশ পেতে থাকে এবং খিঁচুনি বন্ধ হয়ে যায়।
সেরিব্রাল পলসি কি প্রতিরোধ করা যায়?
যদিও সম্পূর্ণ প্রতিরোধ এখনও সম্ভব নয়, তবে এমন কয়েকটি জিনিস রয়েছে যা সন্তানের সেরিব্রাল পলসি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করতে পারে বলে জানান, ক্যান্টনমেন্টের হাইটেক কেয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জন জুলফিকার আলী।
#অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রুবেলা ও জিকা (যা ভ্রূণের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পরিচিত) ভাইরাস বা সংক্রমণের সংস্পর্শ এড়াতে হবে। তবে গর্ভসঞ্চারের আগেই রুবেলার টিকাকরণ করার চেষ্টা করতে হবে।
# রক্তচাপ, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতে হবে।
# মা ও সন্তানের মধ্যে ‘আরএইচ ফ্যাক্টরের’ অসামঞ্জস্যতা শনাক্ত করা
# জন্মের সময় বা পরে মাথায় আঘাত লাগার আশঙ্কা কমাতে হবে।
# অ্যালকোহল, সিগারেট ও কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যা গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।