রোগ পরীক্ষার নামে এক বিস্ময়কর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর একটি পরীক্ষাগারে। শ্যামলীর হাইপোথাইরয়েড সেন্টারে মৃত চিকিৎসকের নামে দেয়া হতো রিপোর্ট। আসলে সেখানে কোনো পরীক্ষাই করা হতো না।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এই বিষয়টির প্রমাণ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুই জনকে দেয়া হয়েছে কারাদণ্ড। প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর শ্যামলী ও মোহম্মদপুরের খিলজি রোডে তিনটি রোগ পরীক্ষাগারে অভিযান চালান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি এদিন তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে কারাদণ্ড ও মোট সাত লাখ টাকা জরিমানা করেন।
এর মধ্যে শ্যামলীর হাইপোথাইরয়েড সেন্টারে গিয়ে প্রতারণা দেখে হতবাক হয়ে যান ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই। তিনি জানান, এখানে করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষর ব্যবহার করে রোগ পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়া হতো।
সেখানে মৃত এক চিকিৎসকের স্বাক্ষর করা অসংখ্য কাগজও পাওয়া গেছে। এই চিকিৎসক গত ৩ মে করোনায় মারা গেছেন।
এছাড়া অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর হাসানের সই করা অসংখ্য ব্ল্যাংক রিপোর্টও পাওয়া গেছে। আগে থেকে সই করা কাগজে ইচ্ছামত প্রতিবেদন লিখে দিতেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট কিংবা জেকেজিকেও হার মানিয়েছে। ১০ বছর ধরে ল্যাব পরিচালনা করছে হাইপোথাইরয়েড সেন্টার। থাইরয়েডের নানা রিপোর্টসহ হেপাটাইটিস, ব্লাড ক্যানসারসহ নানা ধরনের পরীক্ষা করা হতো এখানকার ল্যাবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা বলছেন দুই-একটা টেস্ট করা হলেও বাকিগুলো দেয়া হতো অনুমান করে।’
গত ৩ মে মারা যাওয়া চিকিৎসক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষর ব্যবহার করে রোগ পরীক্ষার প্রতিবেদন
এখানে চিকিৎসকের বদলে তার গাড়ি চালককেও সই করার তথ্য মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবদুল বাকের পলাতক। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
হাতেনাতে ধরা পড়ার পর রাসেল মিয়া ও সোহেল রানা নামে দুই জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এরপর আদালত যায় ২০/২ বাবর রোডের সন্ধি ডায়গনোস্টিক সেন্টারে। সেখানে রোগীদের অতিরিক্ত টেস্ট করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এখানকার পরীক্ষাগারে ল্যাব টেকনেশিয়ান না থাকলেও বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হতো।
এই প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মাহমুদ হাসান ও রাজিব সরকার নামে দুই জনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরা প্রতিষ্ঠানটির কর্মী না। সরকারি হাসপাতাল থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রোগী ভাড়া করে আনতেন।
এখান থেকে আদালত যায় ২২/২০ খিলজি রোডের মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানেও পাওয়া যায় নানা অনিয়ম। ইরন চন্দ্র, রাজিব হাসান ও পরেশ চন্দ্র নামে তিন জনকে যথাক্রমে দুই, দুই ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জাকির ও মইনুল নামে দুই জনকে এক মাস করে কারাদণ্ডও দেয়া হয়।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে আনার অভিযোগে সেখানকার দুই কর্মচারীকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। জনশক্তি না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।