বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিচার দেইখা মনে হয় মরতে পারমু না’

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২০ ১০:৩২

২০১৯ সালের ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কোলে শিশু দেখার পর বাক প্রতিবন্ধী সিরাজুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। এই ঘটনায় মামলা হয় দুটি। একটি পুলিশের করা, একটি সিরাজুলের ভাইয়ের করা। স্বজনের মামলাটি আদালতের আদেশে স্থগিত। পুলিশেরটির তদন্ত কবে শেষ হবে জানা নেই।

মেয়ের জন্য চুড়ি, চিপস নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন কথা বলতে না পারা বাবা সিরাজুল ইসলাম। শিশুকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন রাস্তায়।

তখন পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়াচ্ছে দেশে। অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়, শিশুদের ধরে নিচ্ছে অচেনারা।

সিরাজুলের কোলে শিশু দেখে জেরা করে স্থানীয়রা। কিন্তু কথা বলার ক্ষমতা ছিল না মানুষটির। সন্তানের সামনেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে কয়েকজন উন্মত্ত মানুষ।

সে সময় এই গুজব ছড়িয়ে দেশে যতগুলো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, বিচার হয়নি একটিরও। অবশ্য কেবল গত বছরের ঘটনা নয়, দেশে দল বেঁধে পিটুনির যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটির বিচারের রায় বিরল।

 

এই ঘটনায় করা দুটি মামলার মধ্যে একটি আদালতের আদেশে স্থগিত। পুলিশের করা মামলার দেড় বছরেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডি। সিরাজুলের বৃদ্ধ বাবা বলছেন, তিনি হয়তো ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন না।

ওই সময় এই গুজব ছড়িয়ে দেশে যতগুলো হত্যার ঘটনা ঘটে, তার কোনোটির তদন্তই শেষ করা যায়নি।

সম্প্রতি লালমনিরহাটে দল বেঁধে একজনকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় বিচারের আশ্বাস দিচ্ছে প্রশাসন।

যা ঘটেছিল

ঘটনা ঘটেছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া আল-আমিন নগরের পাগলাবাড়ি এলাকায়।

পাঁচ বছরের মেয়ে মিনজুকে নিয়ে স্ত্রী ঘর ছেড়েছিলেন। এক বছর পর অবস্থান জানতে পারেন সিরাজ। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই মেয়ের জন্য চুড়ি, লিপস্টিক ও চিপস কিনে নিয়ে দেখা করতে যান।

 

তখন বাড়িতে ছিলেন না স্ত্রী। মেয়েকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বের হন সিরাজ। এ সময় স্ত্রীর এক স্বজন ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার দেয়। আর সেখানে থাকা এলাকাবাসী তাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে নাম পরিচয়।

চার বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পল্লীতে হামলার দৃশ্য। ছবি: নিউজবাংলা

একটি প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি সিরাজ। আর তখন তাকে পেটায় শতাধিক মানুষ।

বিচার কোন পর্যায়ে

এ ঘটনায় সে সময় মামলা হয় দুটি। একটির বাদী পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) সাখাওয়াত হোসেনের করা মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৭০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দেড় থেকে দুইশ জনকে আসামি করা হয়। পরে ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করে।

কয়েক দিন পর আদালতে আরেকটি মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই মো. আলম। দুই মামলা দুই রকম হওয়ায় পুলিশের কাছ থেকে তদন্ত যায় গোয়েন্দা শাখায়।

গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। পরে আদালত মামলাটি সিআইডিতে পাঠায়। গত পাঁচ মাসে এই সংস্থাটিও তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

 

সিরাজের বাড়ি লালমোহন থানার মুগিয়া বাজার এলাকায়। ভাড়া থাকতেন সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকার ঠিকাদার মোহর চাঁনের বাড়িতে।

সিরাজের বাবা আবদুর রশিদ মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিরাজ কথা কইতে না পারলেও অনেক বুদ্ধিমান আছিল। যে টাকা আয় করত ওই টাকা থেইকা আমাগো দিত। আমি এখন হাঁটতে পারি না, পরিশ্রমের কাজ করতে পারি না। তাই ডাব বিক্রি করি। পোলাডা নাই, অনেক কষ্টে দিন কাটতাছে।’

বাবা বলেন, ‘হত্যার বিচার দেইখা মনে হয় মরতে পারমু না।’

কথাগুলো বলার সময় সিরাজের বাবার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।

সিরাজের ছোট ভাই ও মামলার বাদী মো. আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশকে কইছিলাম আমি মামলা করব। কিন্তু পুলিশ কয় বেশি কথা বললে হাজতে ঢুকায়া দিব। পরে পুলিশ মামলা করে।’

‘সেই মামলায় আসলদের বাদ দিয়া অন্যদের জড়ানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতার নাম আছে শুনছি। তার লোকজন আমারে ডাইক্যা হুমকি ধামকি দিছে। আমরা অসহায়। বিচার চায়া ভোগান্তিতে পড়ছি।’

 

আলম জানান, পুলিশে ভরসা হয়নি, তাই নিজেই নারায়ণগঞ্জের আদালতে গিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

পরে দুটি মামলারই তদন্তের দায়িত্বে পান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সে সময়ের উপপরিদর্শক সফিকুল ইসলাম।

‘ওনি অনেক বার ডেকে নিয়ে এক ঘটনাই জিজ্ঞাস করেছেন। কিন্তু আসামি ধরেন নাই’- বলেন আলম।

মামলা সিআইডিতে যাওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া উপপরিদর্শক শহিদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন আলম। তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে কথাই বলেননি।

মামলার তদন্ত নিয়ে অবহেলার অভিযোগও করেছেন বাদী।

জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের পরির্দশক (তদন্ত) সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুইটি মামলাই একসঙ্গে তদন্ত করেছি। তবে তদন্ত চলাকালে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আমারা চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।’

মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন নারায়ণগঞ্জ সিআইডির উপপরির্দশক মুন্সি শহিদুল্লাহ। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, আদালত সিরাজুলের ভাইয়ের করা মামলাটি স্থগিত করেছে। পুলিশের মামলার তদন্তের পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন সিরাজের ভাইয়ের মামলার বিষয়ে।

তদন্ত কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিকে তদন্ত করছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

নারায়ণগঞ্জে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ তদন্তে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাকে জানানোর অনুরোধ করছি।’

তদন্ত কোন পর্যায়ে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসামিদের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর