বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘পুলিশ হেফাজতে’ মৃত্যু: তদন্ত কোন পথে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০৮:৫৯

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এসেছে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি দিতে রাজি করাতে না পারাকে তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অভিযুক্তরাও পুলিশ সদস্য হওয়ায় রিমান্ডে তাদের হয়তো সেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এ কারণে রিমান্ড শেষে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিলেটে ‘পুলিশ হেফাজতে’ রায়হান আহমদ নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ সব অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য। এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত ব্যুরো (পিবিআই)।

এ অবস্থায় দ্রুত এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রায়হানের পরিবার ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। দায়সারা গোছের তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

সিলেট নগরের এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী রায়হান আহমদকে (৩৪) গত ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফাঁড়ি থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১১ অক্টোবর ভোরে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।

রায়হানের স্ত্রী ও তিন মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা যান রায়হান। পরে পরিবার ও এলাকাবাসী সরব হলে বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা। কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা) ফুটেজেও গণপিটুনির কোনো প্রমাণ মেলেনি।

রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ১১ অক্টোবর ভোরে ফাঁড়ি থেকে ফোন দিয়ে তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় রায়হানকে পিটিয়ে হত্যা করেন ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা। এ ঘটনায় ১১ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে নগরের কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তন্নি। মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই।

এই মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, পিবিআই পুলিশেরই একটি বাহিনী। আর এ ঘটনায় অভিযুক্তরাও পুলিশ সদস্য। তাই পিবিআই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারবে বলে মনে হয় না।

‘ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি প্রধান অভিযুক্ত পালিয়ে গেছেন এবং যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও জবানবন্দি আদায় করা হয়নি। এমনটি হলে মামলা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হবে’, বলেন এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম।

পুলিশ সত্যতা পেলেও স্বীকারোক্তি নেই

রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। তারা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ। এই তিনজনই বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

রায়হানের মৃত্যুর পর মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে চার জন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাদের মধ্যে টিটু ও হারুন রয়েছেন। আর আশেক এলাহিসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। রায়হানকে ধরে আনা ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা এবং সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানিয়েছিল তদন্ত কমিটি।

এ ছাড়া গত ১৯ অক্টোবর আদালতে জবানবন্দি দেন রায়হানকে নির্যাতনের তিন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কনস্টেবল শামীম, সাইদুর ও দিলোয়ার। তারা ঘটনার রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

জবানবন্দিতে তারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আশেক এলাহি, টিটু ও হারুন মিলে রায়হানকে নির্যাতন ঘটনার বর্ণনা দেন।

তবে গ্রেফতার হওয়া আশেক এলাহি, টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ এসব অভিযোগ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি। টিটু ও হারুনকে দুই দফায় আট দিন এবং আশেক এলাহিকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়েও তাদের জবানবন্দি দিতে রাজি করাতে পারেনি পিবিআই।

রিমান্ডে এই তিনজনই রায়হানকে নির্যাতনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, পলাতক এসআই আকবরই রায়হানকে নির্যাতন করেন।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এসেছে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি দিতে রাজি করাতে না পারাকে তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অভিযুক্তরাও পুলিশ সদস্য হওয়ায় রিমান্ডে তাদের হয়তো সেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এ কারণে রিমান্ড শেষে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কাদের সহযোগিতায় আকবর ভারতে  

বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই আকবর হোসেন ভুইয়ার নেতৃত্বেই রায়হানের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পায় মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ অক্টোবর এসআই আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে ওই রাতেই পালিয়ে যান আকবর।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি আকবরের পালিয়ে যাওয়ার জন্য মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করে।

জানা যায়, সিলেট থেকে পালিয়ে ১৩ অক্টোবর সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে আশ্রয় নেন আকবর হোসেন । স্থানীয় এক দালাল ও এক সাংবাদিকের সহযোগিতায় ১৪ অক্টোবর সেখান থেকে তিনি পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে যান।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে আকবর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জেনেছি। স্থানীয় সাংবাদিক নোমানের কোম্পানীগঞ্জের গ্রামের বাড়ি এবং তার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জে তল্লাশি চালানো হয়েছে। নোমানের স্ত্রী, মা ও বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’ এ ছাড়া তাদের দেশত্যাগে সহায়তার অভিযোগে চোরাকারবারি হেলালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, আকবরকে পালিয়ে যেতে কোনো পুলিশ সদস্য সহায়তা করলে তাকেও বিচারের আওতায় আনা হবে।

অভিযুক্ত তিনজন কেন অধরা

পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আকবর পলাতক। আশেক, টিটু ও হারুন জেলে। এএসআই কুতুব আলী এবং কনস্টেবল সজিব হোসেন ও তৌহিদ মিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, ‘একটি নিরীহ ছেলেকে হত্যার গুরুতর অভিযোগ এবং তার কিছু প্রমাণ পাওয়ার পরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।’  

মামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘মামলার তদন্ত কার্যক্রমে আশাপ্রদ অগ্রগতি নেই। অভিযুক্তরা পুলিশ বলে কী আমরা ন্যায় বিচার পাব না?’

পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদ উদ দীন বলেন, তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই মামলায় আমরা কোনো তাড়াহুড়ো করছি না। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর