তৃতীয় লিঙ্গের জন্য মাদ্রাসা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে মানুষগুলো জানালেন ধন্যবাদ, সেই সঙ্গে তুলে ধরলেন তাদের বঞ্চনা, ব্যথার কথা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ছাতা মসজিদ রোড (লোহার ব্রিজ) এলাকায় যাত্রা শুরু হয় ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’র। দেশে এই মানুষদের জন্য এটাই প্রথম উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘হিজরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দিন, তাহলে কোনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রাস্তায় নেমে কাউকে বিরক্ত করবে না। তারাও চায় সবার মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে।’
দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী।
‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’য় ভর্তি হবেন সোনালী। তিনি কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। একই সঙ্গে দুঃখ, বেদনা আর বঞ্চনার বোধ উঠে আসে তার বক্তব্য।
কামরাঙ্গীরচরে ছাতা মসজিদ রোড এলাকায় ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা'
সোনালী বলেন বলেন, ‘আমরা তো মানুষ আমরা চাই না রাস্তায় গিয়ে টাকা তুলে পেট চালাতে। আমার হাত-পা আছে। আমি চাকরি করে জীবন চালাতে চাই।’
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা জানান, তারা স্কুলে পড়তে গেলে তাড়িয়ে দেয়া হয়, হাসপাতালে গেলে ভালো আচরণ করা হয় না। চাকরি দেয় না। বাধ্য হয়ে জীবিকার কারণে তাদের পথে নামতে হয়।
এঞ্জেল শাকিরার বাসা কামরাঙ্গীর চরে। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে আশা ছিল পড়ালেখা করব। কিন্তু আপনারা সুযোগ দেন নাই। আপনাদের মতো সমাজের মানুষেরা ভাবেন আমরা মানুষ না। আপনারা আমাদের ঘৃণা করেন।
এঞ্জেল শাকিরা
‘ওরা হিজড়া, ওদের সঙ্গে যাব না, ওদের সঙ্গে কথা বলব না। তাই পড়ালেখা হয় নাই। কিন্তু হিজড়ারাই ভালো। পৃথিবীতে যদি ভালো মানুষ থেকে থাকে তবে এক নম্বরে হিজড়ারা ভালো। আর সাধারণ মানুষ আছে, যারা গাড়ি করে, বাড়ি করে, টাকা করে, এই করে সেই করে। কিন্তু হিজড়ারা দুই বেলা খেতে পারলেই খুশি’- শাকিরার মুখে ঝরে পড়ে খেদ।
শাকিরা বলেন, ‘আপনরা তো চাকরি করতে পারেন, বাচ্চা জন্ম দেন। শেষ বয়সে আপনাদের বাচ্চারা আপনাদের দেখবে। আমাদের কী আছে বলেন? আমি বুড়া হয়ে গেলে আমাদের কে দেখবে বলেন?
‘এখন আমি সবল, বুড়া বয়সে কী করে খাব? তাই পড়ালেখা যাই করি না কেন বুড়া বয়েসে সেই নাচ-গান করেই খেতে হবে আমাদের। বৃদ্ধ হয়ে গেলে তো আপনারা কেন সরকারও দেখবে না’ -ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা শাকিরার মনে।
শাকিরার মতো অনেকের সঙ্গেই কথা হয় সেখানে। তাদের কেউ কেউ পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে চাইছেন। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন অন্য কোনো চাকরি করার। কিন্তু সব শেষে মন খারাপ করে সবাই বলেন, ‘আমাদের এই সমাজ মেনে নেবে না।’