দেশে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মাদ্রাসা তৈরি করা হয়েছে। নাম রাখা হয়েছে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ছাতা মসজিদ রোড (লোহার ব্রিজ) সংলগ্ন তিন তলা বাড়ির উপরের তলায় টিনশেড একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির জন্য অর্থায়ন করেছে আহমেদ ফেরদৗস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন। জনাব চৌধুরী মারা গেছেন। বাবার নামে ফাউন্ডেশন চালান কর্নেল রেহানুল বারী চৌধুরী। তবে অসুস্থ হওয়ায় তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি।
১০ জন শিক্ষক পড়াবেন এখানে। তবে এখনও ছাত্র ভর্তি হয়নি। এই কার্যক্রম শুরু হবে শনিবার থেকে।
শিক্ষকরা জানান, ঢাকায় তৃতীয় লিঙ্গের আখড়ায় দেড়শ জনকে তারা পড়ান। এবার সবাইকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আপাতত কামরাঙ্গীর ও আশেপাশের এলাকার ছাত্র ভর্তি করা হবে।
এর কারণ, মাদ্রাসাটি আবাসিক নয়। দূরের শিক্ষার্থীদেরকে আগের মতোই আখড়ায় গিয়ে পড়ানো হবে। ভবিষ্যতে পথ শিশুদের জন্যও মাদ্রাসা চালুর পরিকল্পনা আছে।
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবদুল রহমান আজাদ নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের শিক্ষা দিয়ে তাদের মধ্য থেকেই শিক্ষক তৈরি করব। পরে তারাই দেশব্যাপী শিক্ষা দেবেন।’
ঢাকায় আট থেকে ১০ টি সেন্টারে গত ছয় মাস ধরে এই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
মাদ্রাসার উদ্যোক্তা আবদুল রহমান আজাদ বলেন, ‘প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। দ্বিতীয় দিক হচ্ছে মানবিক দিক। তারা কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। তাদের কোন দোষ নাই। সব দোষ আমাদের। আমরা তাদের স্কুল, কলেজ, মসজিদে যেতে দেই না। এই জন্য আমার সমাজ, আমি, আমার রাষ্ট্র দায়ী।’
মাদ্রাসার আনুষ্ঠানিক যাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘হিজরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু। বলেন, ‘আয়োজকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
‘যাত্রাবাড়ী থানা হিজরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি রিনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে আমার তত্ত্বাবধানে ৫০ জনের আছে। আমরা সকলেই মুসলিম। তারা আমাদের আখড়ায় গিয়ে পড়ান। কোরানের আলোয় আলোকিত করার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি মাওলানা হতে চাই।’
মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল আজিজ হোসাইনি বলেন, ‘আজকের দিনটি বিশ্বের একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। বিশ্বে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। পুরুষ-নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাদের শিক্ষার জন্য নেই কোন প্রতিষ্ঠান। তারা মসজিদের নামাজ থেকে শুরু করে সকল কিছু থেকে বঞ্চিত।’
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল মাদবর। তিনি বলেন, ‘মেয়র সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’
কথা হয় মাদ্রাসাটির বাড়িওয়ালা মামুনের সাথে। তিনি বলেন, ‘একটা অবহেলিত গোষ্ঠী শিক্ষার আলো দেখবে, এটা শুনেই আমি বাড়ি ভাড়া দিয়েছি। তাদের জীবন ব্যবস্থা ভালো না। শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক আচার ব্যবহার পরিবর্তন হয়ে মানুষ তাদের সঙ্গে মিশবে এটাই প্রত্যাশা আমার।’
বাংলাদেশ ট্রাঞ্জেন্ডার ওয়েমেন এক্টিভিটিস জয়া সিকদার নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘যারা এই শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তারা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে শুধু মাদ্রাসা কেন, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানুষদের শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।’
মাদ্রাসার ছাত্র ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন জয়া। বলেন, ‘আমি আশা করব এই মাদ্রাসা লিঙ্গ রুপান্তরবান্ধব এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে। কারণ, এই মানুষগুলো পরিবারে থেকেও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে আসে। তাই নতুন করে এখানে কেউ যেন যৌন নিপীড়নের শিকার না হয় এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট বড় সবাইকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।’