নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের দখল থেকে ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা তার মদিনা গ্রুপের নির্মাণাধীন সিমেন্ট কারখানার জন্য এই জমি কয়েক বছর ধরে দখলে রেখেছিলেন।
সোনারগাঁওয়ের চর রজমজান সোনাউল্লা এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযান চালায় প্রশাসন।
এই জমিতে গত ১ নভেম্বরও অভিযান চালিয়েছিল। সেদিন এক একর ৩৯ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু স্থায়ী স্থাপনা ও ভারী যন্ত্রপাতি থাকায় বাকি জমি সেদিন দখলমুক্ত করা যায়নি।
সেদিন তিন দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। কিন্তু সেটা করা হয়নি।
চতুর্থ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, জমিতে রাখা বিপুল পরিমাণ কয়লা, পাথর ও বালু সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে টিনের ঘর ও বেড়া।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘সরকারি সম্পত্তি’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ওই জমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন জেলা প্রশাসন গ্রহণ করেনি।
নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গত ২৬ অক্টোবর ইরফান সেলিমকে গ্রেফতারের পর তার বাবা হাজী সেলিমের দখলদারিত্বের বিষয়টি আবার সামনে আসে।
প্রকাশ হয়, পুরান ঢাকায় বহু সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা, বাড়ি দখল করেছেন এই সংসদ সদস্য।
- আরও পড়ুন: জমি দখল হাজী সেলিমের স্ত্রীর নামেও
১৯৪৭ সাল থেকে হাবীব ব্যাংক এবং বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের জমি স্ত্রীর নামে গত এপ্রিল দখল করেন হাজী সেলিম। দখলদার উচ্ছেদে সরকার বুলডোজার ব্যবহার করে। আর সে সময় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের জমি দখল করতে বুলডোজার ব্যবহার করেন হাজী সেলিম।
২৭ অক্টোবর সে জমি দখলমুক্ত করে নিজেদের আয়ত্বে ফিরিয়ে আনে অগ্রণী ব্যাংক।
- আরও পড়ুন: হাজী সেলিমের ‘দখল’: জবি ছাত্রদের বিক্ষোভ
এরপর প্রকাশ পায়, সরকারি বধির স্কুলকে দেয়া জমিতে হাজী সেলিমের কারণে স্থাপনা তৈরি করা যায়নি। স্কুলের জমিতে সিএনজি স্টেশন তৈরি করে ব্যবসা করেছেন।
পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের তিব্বত হলের দখলমুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। ২০০১ সালে ওই স্থাপনার অবকাঠামো পাল্টে স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নাম দিয়েছেন হাজী সেলিম।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বুড়িগঙ্গার তীর দখলের তথ্যও জানা যায় সেলিমের বিরুদ্ধে। বিআইডব্লিউটিএ তখন গুড়িয়ে দেয় বেশ কিছু স্থাপনা।
আরও পড়ুন: বধির স্কুলের জমি হাজী সেলিমের দখলে
এবার ঢাকা থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরেও হাজী সেলিমের দখলদারিত্বের খবর পাওয়া গেল।
ছেলে গ্রেফতারের পর হাজী সেলিম প্রকাশ্যে এসেছেন একবারই। তাও কিছু সময়ের জন্য। গত ৩ নভেম্বর পুরান ঢাকায় পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা গেছে তাকে।