অপহরণ ও হত্যার মিথ্যা অভিযোগে গত চার বছর বিভিন্ন মেয়াদে বন্দি জীবন কাটানো ছয় নির্দোষ ব্যক্তি অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন।
এদেরকে ফাঁসিয়ে আদালতে এক নারীর দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও পুলিশ ও সিআইডির তিন কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দুই বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বিচারক। আর এক জনকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফারহানা ফেরদৌস এই আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় ভুক্তভোগী ছয় ব্যক্তি, যাকে খুন করা হয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল, সেই মো. মামুন ও তিন তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামুন ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৬ সালের ৯ মে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম।
আসামি করা হয় তাসলিমা আক্তার, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক মিয়া, খালাতো ভাই মো. সাগর, সোহেল মিয়া ও ছাত্তার মোল্লাকে।
প্রথমে ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে প্রতিবেদন দেন ফতুল্লা থানার উপপরির্দশক মিজানুর রহমান।
এতে তিনি এক চাক্ষুষ সাক্ষীর জবানবন্দিও জমা দেন। এতে দাবি করা হয়, ওই নারী নিজে দেখেছেন, আসামিরা মামুনকে খুন করে শীতলক্ষ্যায় মরদেহ ভাসিয়ে দিয়েছে।
পরে মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। তারাও খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে মরদেহ খুঁজে না পাওয়ার কথা জানায় আদালতকে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
এর পর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। ২৩ মাস তদন্ত শেষে উপপরির্দশক জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ আদালতে অপহরণের ‘প্রমাণ’ হাজির করে প্রতিবেদন দেন। এরপর শুরু হয় বিচার।
তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানি চলাকালে মামুন নিজেই হাজির হন বিচারকের সামনে। সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য।
ভুক্তভোগীদের পক্ষের আইনজীবী এমদাদ হোসেন সোহেল বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় তাদের শাস্তি ও কারাভোগকারী ছয় জনের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।’
দেড় বছর কারাভোগকারী তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘ছয় বছর ধরে হয়রানি করেছে আমার পরিবারকে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর রিমান্ডে অত্যাচার করেছে পুলিশ। খুন না করে, অপহরণ না করে মিথ্যা মামলায় সাজা খেটেছি। যারা হয়রানি করেছে তাদের শাস্তি চাই।’
নারায়ণগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী খোকন নিউজবাংলাকে জানান, ‘যিনি ভুয়া মামলা করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আদালত।’
চাঁদপুর জেলার মতলব থানাধীন শাখারীপাড়া এলাকার মামুনের বাবা আবুল কালাম অভিযোগ করেন, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার তাসলিমার সাথে তার ছেলে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই সর্ম্পকের জের ধরে ২০১৪ সালের ১০ মে মুঠোফোনে তার ছেলে মামুনকে ডেকে নেয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ।
দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে তার ছেলে মামুনকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করা হয়েছে অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন।
পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়। পরে স্বীকারোক্তির জন্য পাঠালেও তারা কেউ জবানবন্দি দেননি। কিন্তু পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন মামলার স্বাক্ষী ও আবুল কালামের সাবেক স্ত্রী মাকসুদা বেগম।
মামুন আদালতে হাজির হলে পুরো ঘটনা যে বানোয়াট তা ফাঁস হয়। সেদিন আদালত পুলিশ ও সিআইডির তিন কর্মকর্তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়।