বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম।
নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ মৌসুম চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই চার মাস চরেই কাটাবেন উপকূলের প্রায় ১০ হাজার জেলে।
এরই মধ্যে জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামতসহ চরে অস্থায়ী বসত গড়ার নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছেন। সব মিলে শুঁটকি পল্লিগুলোতে ৫০টি ডিপো ও ৯৫০ টি অস্থায়ী শুঁটকি ঘর তৈরির অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ।
চরে যাওয়ার আগে জেলেরা যে যার ধর্ম অনুসারে নৌকায় প্রার্থনাও সেরে নিয়েছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ইউনিয়নের মহাজন বহরদার নূর নিউজবাংলাকে জানান, ‘নৌকায় মিলাদ পড়ে সিন্নি দিয়েছি। বিপদ-আপদ বালা-মসিবত থেকে বাঁচতে মানত করেছি। সবার দোয়া নিয়ে চারটি জাল, দুটি ট্রলার ও ৩০ জন জেলে নিয়ে শুঁটকি পল্লি আলোরকোলের দিকে রওনা দিলাম।’
সাগরে মাছ ধরতে বুধবার থেকেই মোংলার পশুর নদীর চিলা খালে জড়ো হচ্ছেন জেলেরা। বন বিভাগের কাছ থেকে পাস পারমিট নিয়ে দলবেঁধে তারা ছুটতে শুরু করেছেন।
প্রায় যুগ ধরে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকি বানান বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার উলবুনিয়া গ্রামের মাহাবুব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটু ভালো থাকার আশায় সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা দিলাম। সবাই স্বপ্ন দেখছি ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু ঋণের বোঝা কাটবে কিনা তা-ই বড় প্রশ্ন।’
বাগেরহাটে রামপাল উপজেলার সমুদ্রগামী মৎস্যজীবী সমিতির উপদেষ্টা শেখ আ. জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বচ্ছলতার আশায় জেলে-মহাজনরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায়। তারা সরকারকে কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। অথচ তাদের সহজ শর্তে ঋণের দাবি আজও উপেক্ষিত।’
২০১৮-১৯ মৌসুমে ৪১ হাজার ৫৪ কুইনন্টাল শুঁটকি থেকে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ মৌসুমে ৪৪ হাজার ৭১৩ কুইনন্টাল শুঁটকি থেকে ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বনবিভাগ। তবে এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আবহাওয়ার অনুকূলে থাকলে রাজস্ব আহরণ আরও বৃদ্ধির আশা করছে বন বিভাগ।
রামপাল উপজেলার সদররের বাসিন্দা বহরদার ফরহাদ শেখের নিউজবাংলাকে বলেন, সরকার সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা করায় জেলেরা অনেকটাই নিরাপদ। তবে ভাবাচ্ছে করোনার প্রকোপ। শীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বিচ্ছিন্ন চরে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই।’
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, এবার শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বেশ কিছু শর্তে জেলেদর শুঁটকি পল্লিতে যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারও দুবলায় একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে।