ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মুর্শেদসহ ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ক্রসফায়ারে হত্যার চেষ্টা ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কামরুল হাসানের আমলি আদালতে এই মামলা করা হয়।
মামলার বাদী পিকআপ ট্রাকের চালক মো. গিয়াস উদ্দিন দুলাল। তার বাড়ি ছাগলনাইয়ার পূর্ব পাঠানগড় গ্রামে।
মামলায় ১১জন পুলিশের সদস্যের বাইরে আরও দুই জনকে আসামি করা হয়। তারা পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা)।
ফেনী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাবেক ওসি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- ছাগলনাইয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ইসলাম, মো. খোরশেদ আলম ও দেলোয়ার হোসেন, উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মো. ফিরোজ আলম ও মো. মাহবুব আলম সরকার, কনস্টেবল সুকান্ত বড়ুয়া, সাবেক কনস্টেবল মো. মাঈন উদ্দিন, থানায় কর্মরত বর্তমান কনস্টেবল মো. নুরুল আমিন, মো. নুরুল আমিন ও মো. সিরাজুল ইসলাম এবং লিশের দুই সোর্স ছাগলনাইয়ার উপজেলার এলনা পাথর এলাকার আবুল হোসেনের দুই ছেলে আবুল হাসেম ও আবুল খায়ের ছোটন।
আরজিতে বলা হয়, আমি (গিয়াস উদ্দিন দুলাল) একজন পিকআপ চালক ছিলাম। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি আমি ফেনী সদরের কাজীরবাগে মাটি বহন করছিলাম। সেদিন আবুল হাসেম ও আবুল খায়ের নামে পুলিশের দুই সোর্সসহ পুলিশ সদস্যরা এসে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন বিকেলে তারা কাজীরবাগ হতে আমাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকায় ব্রাদার্স ব্রিকফিল্ডে নিয়ে যান। সেখানে ওসি মুর্শেদ এসে আমার চোখ বেঁধে পুনরায় চাঁদা দাবি করেন।
চাঁদা দিতে না চাইলে তারা সবাই মিলে আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দেন। খবর পেয়ে আমার মা ও বোন সেখানে ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেন। এতে রাজি না হয়ে তারা আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে শুভপুর ইউনিয়নের বল্লভপুরে চম্পকনগর রাস্তায় মাথায় একটি জমিতে নিয়ে আমাকে মাটিতে ফেলে হত্যার চেষ্টা চালায়।
আরজিতে আরও বলা হয়, ওসি মুর্শেদ ঘটনাস্থলে থাকা সুকান্ত বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্যের শটগান দিয়ে আমার ডান পায়ে তিনটি গুলি করেন। আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে মৃত্যু হয়েছে ভেবে তারা আমাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। দেহে প্রাণের অস্তিত্ব টের পেয়ে চিকিৎসকরা আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠান। এর তিনদিন পর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে ডান পায়ের নিম্নাংশ কেটে বাদ দেন।
পরে থানার সাবেক উপপরিদর্শক মো. মাহবুবুল আলম সরকার ১৪শটি ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মিথ্যা মামলা (জিআর ১০/১৯) করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার সাবেক এসআই গত বছরের ২৭ জানুয়ারি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেও সাবেক ওসি মুর্শেদকে পাওয়া যায়নি।
এসআই মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই দিন দুলালের কাছ থেকে মাদক উদ্ধারে গিয়ে শটগানের গুলি করেছিলাম। তার বিরুদ্ধে সাত-আটটি মামলা রয়েছে।’