ই-কমার্স ব্যবসার নামে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস’ নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি। ডেসটিনির মতো পিরামিড পদ্ধতিতে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভনে কোম্পানিটি ১০ মাসে ২২ লাখ সদস্যের কাছ থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি বিশেষ দল।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন আলামিন প্রধান (এমডি ও সিইও), নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জসীম, ম্যানেজার মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. তানভীর আহম্মেদ, সহকারি ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. পাভেল সরকার এবং অফিস সহকারি নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি অভিযোগ করেন, কোম্পানি ই-কমার্সের নামে লাইসেন্সবিহীন অনলাইন এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিম অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
অভিযানের পর কলাবাগান থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে থাকা গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার আলামিন প্রধান ও জসীমকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুটি পিকআপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, রাউটার, দুটি পাসপোর্ট ও কোম্পানির বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
কোম্পানিটির উত্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে হাফিজ আক্তার বলেন, এই কোম্পানি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান এক সময় ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে আরেকটি এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১০ মাসে তারা উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৮টি সদস্যদের আইডি থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, তাদের ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন অ্যাপভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য রয়েছে।
যেভাবে প্রতারণা করা হতো
কোম্পানির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে সাধারণ মানুষকে উচ্চ কমিশনের লোভ দেখায়। আগ্রহীরা গুগল প্লে-স্টোর থেকে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক আগের রেজিস্ট্রেশনের আপলিংক আইডির রেফারেন্সে বিকাশ, নগদ, রকেট নম্বরে অ্যাকাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২শ টাকা দিতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশনের (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।
পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন
যিনি রেফার করবেন, তিনি তার নিচের তিনটি আইডি থেকে ৪শ টাকা করে কমিশন পাবেন। এরপর ওই তিনটি আইডি থেকে যখন ৩x৩=৯ আইডি হবে, তখন আপলিঙ্কের আইডির অধিকারী ২০ শতাংশ কমিশন পাবেন। এরপর ডাউনলিংকের যতো আইডি হবে, আগের আইডি তা থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাবেন। এটি মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ।
এলএমএল ব্যবসা আড়াল করার কৌশল
কোম্পানিটি নামেমাত্র কয়েকটি পণ্য, যেমন- অ্যালুভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি - শুধুমাত্র তাদের রেজিস্টার্ড সদস্যদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এর লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে দেয়ার কথা বলে।
গ্রেফতারকৃতরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে যে, তারা ই-কমার্স করছে।