বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্রকারী খোন্দকার মোশতাকের ডান হাত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াউর রহমানকে সেনপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত করেন। এ দুই জন শুধু ক্ষমতাই দখল করেননি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে নিয়ে যান। সারা দেশ হয়ে যায় খুনিদের রাজত্ব।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
৭৫’ এর ১৫ আগস্ট ও ৩রা নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যার পর ওই ঘটনাটাকে এমনভাবে দেখানো হচ্ছিল যে, এটা একটা পরিবারকে হত্যা করা। তবে আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি এইটুকুই বলব, সেদিন শুধু হত্যাই করা হয়নি, নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।
'মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল যে, একটি পরিবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে, তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আমরা দেখি ৩রা নভেম্বরের ঘটনা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ধরা পড়ে ৩রা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা মানতে পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করতে পারেনি, তাদের দোসররা ও তারাই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের হোতা।’
‘ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলা’ বিএনপি নেতাদের ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট চুরির অপরাধে দেড় মাসের মধ্যে জনগণের অভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা ভোট নিয়ে কথা তোলেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা জিয়ার নির্বাচন দেখুক, আর এরশাদের নির্বাচন দেখুক। সে নির্বাচনে আমরা কী চেহারা দেখেছি। সেখানে তো জনগণ লাগেনি।
'কথাই ছিল, ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। ভোটার তালিকার কোনো বালাই ছিল না। এভাবেই তারা নির্বাচনগুলি করেছে।’
বিএনপি আমলের ভুয়া ভোটের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোট প্রস্তুত করা হলো। এই ভুয়া ভোট দিয়ে ভোটার তালিকা বানালো হলো।’
‘আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনের পক্ষে’ বলেও এ সময় মন্তব্য করেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন একটা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে দুই শতাংশও ভোট পড়েনি। কিন্তু খালেদা জিয়া দেখালো যে সে টোটাল মেজরিটি পেয়েছে।’
নির্বাচনে কারচুপি জিয়ার আমলে শুরু এমন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, এটা কারা শুরু করেছিল, জিয়াউর রহমান তার হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে শুরু করেছিল।
‘কিন্তু সে সময় ‘না’-এর বাক্স কেউ খুঁজে পায় নি। সিল মারো, বাক্স ভরো আর ঘোষণা দাও– এটা তো জিয়াউর রহমানেরই শুরু করা।’
সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৈরি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়ারই পরিচিতি। তারই হাতে তৈরি। তার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাও খালেদা জিয়ারই, বিদেশে থেকে নিয়ে আসা।
‘ফখরুদ্দিন সাহেব ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে কাজ করতেন। তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হলো। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনাবাহিনীর তৈরি ছিল।’
নয় জন জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে জেনারেল মঈনকে সেনাপ্রধান করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সেও খালেদা জিয়ারই পছন্দের ছিল। তারাও এসে চেষ্টা করলো দল গঠন করতে।’
ড. ইউনূসকে একটি মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং ড. ইউনূস– তারা গেলেন রাজনৈতিক দল করতে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, ৭০ জনের তালিকা করে দল গঠন করতে গেলেন।’
সামনে শীতে করোনাভাইরাসে জনগণকে সচেতন হওয়ার র আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার করোনাভাইরাস দেখা দিচ্ছে। ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যেখানে যেখানে শীত পড়েছে, সেখানে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
‘এ জন্য আমি দেশের মানুষকে আগে থেকেই সতর্ক করেছি। সামনে শীত আসছে, এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে, নিয়ম মেনে চলতে হবে।‘
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও করোনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার শান্তির জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।