বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুদকের স্বাধীন কাজে উৎসাহ দিলো হাইকোর্ট

  •    
  • ৩ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৫০

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘কীভাবে আমরা মূল্যায়ন করব কে আসল দুর্নীতিবাজ আর কে না? আপনি কি দুর্নীতি থেকে মুক্ত? আমাদের দিকে তাকাইলে অসুবিধা কি?’

দুর্নীতি এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো অনুসন্ধানে আদালত হস্তক্ষেপ করলে বাজে নজির তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।

দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে উৎসাহও দিয়েছে আদালত।

হাইকোর্ট বলেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের ঘরে বসে থেকে দুর্নীতি দমন করতে পারবে না। তাদের গোয়েন্দাগিরি করতে হবে। কোনখানে কী হচ্ছে, ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণসহ ধরতে হবে। এটাই তাদের কাজ।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপাকে তলব করে দুদকের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানির সময় এ মন্তব্য করে আদালত।বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এ শুনানি হয়।

রূপার পুরো পরিবার করোনা পজিটিভ হওয়ায় দুদকে হাজির হতে তাকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিতে বলেছে আদালত।

রূপার রিটের শুনানি ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।শুনানিতে রূপার আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে উদ্দেশ করে জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দুদকে হাজির হতে তার (রূপার) অসুবিধা কী?’

আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘যেভাবে নোটিশ করে হাজির হতে বলেছে তাতে প্রাথমিক ধারণা জন্মায় দুর্নীতির সঙ্গে তিনি জড়িত।’ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে দুদকের তলব করার চিঠি ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবহিত করতে হবে- এমন কোনো আইন আছে কিনা আদালতের এমন প্রশ্নে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আইন নেই। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল একটি সাংবিধানিক পদ। আর প্রধান বিচারপতির অধীনে সুপ্রিমকোর্ট তথা সব কোর্ট। সে ক্ষেত্রে কোনো অ্যাক্টিভিটিজ করতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে করলে ভালো হয়।’

তখন বিচারক বলেন, ‘দুদকের নোটিশ তো কোনো কোর্টের বিরুদ্ধে নয়, অভিযোগ একজন আইন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।’ দুদকের এই অনুসন্ধানে হস্তক্ষেপ করলে বাজে নজির তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করে আদালত।

‘আমরা সবাই চাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ হোক। এমনকি আপনারাও চান। আমি আমার কয়েকটা রায়ে বলেছি, দুদক ঘরে বসে থাকলে দুর্নীতি দমন করতে পারবে না। গোয়েন্দাগিরি করতে হবে দুদককে। কোনখানে কী হচ্ছে। ব্যক্তির অপরাধের প্রমাণসহ তাদের নিতে হবে। এতে অসুবিধার কী হলো।’

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘দুদকের নোটিশের পর উনি (রূপা) হাজির হয়ে বলবেন, এর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আমি এগুলোর কিছু জানি না। তারপর দুদক তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানের বের করবে তিনি দোষী নাকি নির্দোষ।’পাবলিক পারসেপশন (জনগণের ধারণা) বড়, নাকি দুর্নীতি বন্ধ করাটা বড় বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘দুর্নীতি বন্ধ করাটাও বড়, পাবলিক পারসেপশনও বড়। ’বিচারক বলেন, ‘পাবলিক পারসেপশন যদি আমাদের জাস্টিসকে (বিচার) ব্যাহত করে অথবা ফেবার করে তাহলে সেটি সাবজুডিস ম্যাটার হওয়া উচিৎ। দুর্নীতিকে বন্ধ করাই তো আমাদের দরকার।

‘পাবলিক যদি ধরে নেয় এখন কোর্টের লোক দেখে কোর্ট কোনো অ্যাকশনে যায় না। এটাও তো পাবলিক পারসেপশন। তখন কি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে না?’আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ সময় বলেন, ‘যারা রিয়েল (প্রকৃত) দুর্নীতি করে তাদের ধরতে চাই। সে ব্যপারে সহযোগিতা করতেও রাজি আছি। কিন্তু অন্য কেউ যাতে আবার ভিকটিম না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’বিচারক তখন বলেন, ‘কীভাবে আমরা মূল্যায়ন করব কে আসল দুর্নীতিবাজ আর কে না? আপনি কি দুর্নীতি থেকে মুক্ত? আমাদের দিকে তাকাইলে অসুবিধা কি?’বিচারক আরও বলেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যান সাহেবকে আমরা একদিন ডেকেছিলাম। আমি বলেছিলাম আপনি চিঠি দিয়ে আমাকে জানান লিখিতভাবে। এবং ওখানে আমি বলেছিলাম, দুইটা জায়গায় একটু অনুসন্ধান করেন। তার মধ্যে একটা হল, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন এবং আরেকটি হলো অধস্তন আদালত অঙ্গন। দুর্নীতি তো হচ্ছেই। এটা তো লুকানো ছাপানোর কিছু নাই। এটাও আবার পাবলিক পারসেপশন। ‘দুদক চিঠি দিলে আমরা সবাই যদি বলি, না না উনাকে ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে রাইখেন না। আর আপনারা দুনিয়ার সব দূর করেন। এটা কি ঠিক হবে?’পরে আদালত রূপাকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিতে দুদককে আদেশ দিয়ে রিটের শুনানি ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করে। আদালতের ডিএজি রূপার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলনও শুনানি করেন। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৮ অক্টোবর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপাকে নোটিশ দেয় দুদক।দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সই করা চিঠিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ নভেম্বর দুদকে হাজির হতে বলা হয়। রূপার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ করে জি কে শামীমসহ বিভিন্ন আসামিকে জামিন পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে দুদকের চিঠি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন রূপা। এর আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রিটের শুনানি করতে অপারগতা জানায়।

এ বিভাগের আরো খবর