২২ বছর ধরে ঢাকায় আইসক্রিম বিক্রি করেন আব্দুল মালেক। করোনায় ভাটা পড়েছে বিক্রিতে। থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন সংসার চালানো দায়।
নিউজবাংলাকে আব্দুল মালেক বলেন, ‘বাজারে যাবার পারি না, সবকিছুতেই আগুন। সারাদিন বেইচ্যা দুইশ তিনশ ট্যাকা লাভ থাহে। আর বাজারে গিয়া শুনি মরিচের কেজি আড়াইশ।’
টাকা নেই, তাই তাজা বা আস্ত সবজি কিনতে পারেন না মালেক। বাচারে নষ্ট সবজি কেটে বিক্রি হয় যেগুলো, সেগুলো কমে পাওয়া যায় বলে কেনেন তিনি।
মালেক বলেন, ‘আমরা তো আর ৬০ ট্যাকায় পটল কিনবার পারি না গো মামা। বাজারে বেচার পর একটু পচাধছা বাইচ্যা থাহে, তাই কোনো রকম কিনে এনে দিন চালাই।
‘আগে একটু আলু ভর্তা খাইবার পারতাম আর এখন আলুর দাম ৫০ ট্যাকা। দুই দিন আগে আধা কেজি কিনছিলাম। তাও বাইছা নিতে হইছে যেগুলা একটু পচা।’
গত কয়েক মাস ধরেই আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তোলপাড়। তবে কেবল এই দুটি পণ্য নয়, সবজির দাম অস্বাভাবিক বেশি।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে কম। শীতেরগুলোও ওঠেনি খুব একটা। এই সময়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজির নিচে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না বলা যায়।
এর মধ্যে আবার করোনাকালে কমে গেছে আয়। শুরুতে যেভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল বিত্তবানরা, থেমে গেছে সেই তৎপরতাও।
এই অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষরা তিন বেলা পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ইঁদুর ও ছারপোকা মারার ওষুধ বিক্রি করা ফিরোজ হোসেন বলেছিলেন, ‘সকালে দুইটা রুটি আর করলা ভাজি খাইয়া বাইর হইছি। রাতে বাসায় ফিইরা কী খামু জানি না। পান্তা ফান্তা কিছু একটা খাইয়া নিমু। বাজারে জিনিসের যে দাম, ভাজি আর খাইতে পারুম না।’
১৪ অক্টোবরের শেষ বাজারে দিয়েছিলেন এই শ্রমজীবী মানুষ। এরপর টুকটাক জিনিসপত্র কিনেছেন পাশের দোকান থেকে।
‘কোরবানির ঈদে শেষ গরুর মাংস খাইছি মামা। ভালো মাছ কিনবার পারি না। সারা দিন এই ওষুধ বেইচ্যা যা থাহে তাতে আমাগো মত মানুষের পক্ষে ভর্তা-ভাজি খাওয়াই কঠিন। আগে আলু ভর্তা খাওয়ন যাইত। এখন এইডাও কঠিন।’
ফিরোজ থাকেন মাদারটেক এলাকায়; একটা টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। গত পাঁচ মাসের ভাড়া বাকি পড়ে গেছে। বাড়িওয়ালা তাগাদা দেন। কিন্তু কী করার আছে তার?
বাস চলাচল শুরু হলেও ভালো নেই পরিবহন শ্রমিকরাও। এই যেমন রাকিব হোসেন।
আছিম পরিবহনে চালকের সহকারী তিনি। থাকেন মিরপুরে।
বলছিলেন, ‘আগে এই দুপুরে বাস ভইরা থাকত যাত্রীতে। অহন খালি বাস লইয়া যাইতাছি। সারা দিন-রাইতে ট্রিপ মারা শেষে বাজারে যাইয়া কিছু কিনবার পারি না। আগে হাজার ট্যাকার কাছাকাছি থাকলেও এখন থাহে চাইর/পাঁচশ। হেইডা অয় ভাগাভাগি। তাও সার্জেন্ট ধরলে ট্যাকা নিয়া ঘরে যাওয়ন লাগে না।
‘বাসায় আমার তিন বছরের বাচ্চা আছে। হের পেছনে ডেইলি খরচ আছে। বাচ্চাটার জন্য একটু ভালো খাবার নিমু সেই উপায় নাই। এক তরকারি দিয়া ভাত খাইতে অয়।’
হজরত আলী রিকশা চালান। যাত্রী কেন কমল তার হিসাব মেলে না। একটা টিনের ঘর ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকেন মধ্য বাড্ডাতে।
জানান, মার্চ থেকে আয় নেমেছে অর্ধেকে। বাসা ভাড়া তিন হাজার এখন বিরাট চাপ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যা কিনবার যাই তাই ষাইট থে আশি ট্যাকা। মাছ কিনি না, গরুর গোশতের কথা ভাবিই না।’
বাজার পরিস্থিতি
শনিবার কারওয়ানবাজারে গিয়ে এই মানুষগুলোর আক্ষেপের কারণ বোঝা গেল।
কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।
আলু ৪৫ থেকে ৫০, করলা ৬০ থেকে ৮০, কাকরোল ৫৫ থেকে ৬০, টমেটো ৮০ থেকে ১২০, মুলা ৬০, ঝিঙা ৭০, ঢেঁড়স ৫৫ থেকে ৬০, গাজর ৮০, বরবটি ১০০, বেগুন ৭০ থেকে ৮০, পটল ৭০ আর সবচেয়ে কম দেখা গেল পেঁপে ৪০ টাকা কেজি করে।
খুচরা বিক্রেতা মইমুলুল বাবু বলেন, বন্যায় সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়ছে।