লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে মসজিদে তর্কাতর্কির জেরে একজনকে পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর কাউকে গ্রেফতার না করার দাবি জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
ঘটনাটি ‘জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে’ দাবি করে ‘গ্রেফতার অভিযান’ বন্ধ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি করা হয় বিবৃতি।
ঘটনার চার দিন পর সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এতে বুড়িমারীর বর্বরতাকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ ও ‘হৃদয়বিদারক’ উল্লেখ করে পরওয়ার বলেন, ‘আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই’।
- আরও পড়ুন: বুড়িমারী বর্বরতা: রিমান্ড শুনানি পেছাল
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বাড়িঘরে হামলাকে ‘নিতান্তই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে সেটারও নিন্দা জানানো হয়।
বুড়িমারী বর্বরতার কথা উল্লেখ করে জামায়াত নেতা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একে ‘উত্তেজিত জনতার কাজ’ বলেছিল। কিন্তু তিন দিন পর এটাকে ‘ভিন্নখাতে’ প্রবাহিত করাতে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জামায়াতের লোকজনকে ‘হয়রানি করছে’।
পরওয়ার বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনাকে আঁড়াল করে জামায়াতের লোকজনকে হয়রানি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এই হয়রানি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
লালমনিরহাটে ‘ষড়যন্ত্র ও গ্রেফতার অভিযান’ বন্ধ করে আটক নেতাদের দ্রুত মুক্তি দেয়ারও দাবি জানান হয় বিবৃতিতে।
বুড়িমারী বর্বরতার ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। গ্রেফতার হয়েছেন ১০ জন। তবে এদের কেউ জামায়াতে নেতা-কর্মী এই তথ্য আসেনি গণমাধ্যমে।
আগের দিন যা বলেছিলেন পরওয়ার
গত ২৯ অক্টোবর বুড়িমারীতে ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল, ইসলামের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল’ স্লোগান দিয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এই স্লোগানটি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
রোববার পরওয়ার এ প্রসঙ্গে কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটা লোক কোথা থেকে কী স্লোগান দিল, কোত্থেকে কে শুনল, আপনি কী শুনলেন, তাতে আমাদের কী?’
“আওয়ামী লীগ ‘জয় বাংলা’ বলে যদি ‘নারায়ে তাকবির’ লাগিয়ে দেয় দোষ আছে?”- এমনও বলেন তিনি।
- আরও পড়ুন: বুড়িমারীর বর্বরতায় চুপ কেন সবাই
এই ঘটনায় জামায়াত ২৯ অক্টোবরই বিবৃতি দিয়েছে বলেও দাবি করেন পরওয়ার। জামায়াতের সব বিবৃতি ইমেইলে এলেও এ বিষয়ে বিবৃতি কেন আসছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কী বিবৃতি দেই, সেটা কোথায় ছাপা হয়, সেটা আপনাদের সাংবাদিকদের দেখার টাইম আছে নাকি?’
তবে জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাতেও ৩০ নভেম্বর বুড়িমারী বর্বরতা নিয়ে জামায়াতের কোনো বিবৃতি ছাপা হয়নি। ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি শেষে রোববার প্রকাশিত পত্রিকাতেও আসেনি তা।
সেদিন এই দাবি করলেও বিবৃতি আসলে দেয়া হয় আরও একদিন পরে।
যা বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ দেওয়ান নিশাত সেদিন হামলাকারীকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, হামলাকারীদের সামনের সাড়িতে যারা ছিল, তারা এলাকায় অপরিচিত। তবে তারা যে স্লোগান দিয়েছিল, তাতে এদের পরিচয় সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
চেয়ারম্যান নিশাত বলেন, ‘আমার সামনে যে ধ্বনিগুলো দিয়েছিল, তাতে মনে হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিল। আমরা কাদের মোল্লার (জামায়াত নেতা) ফাঁসি কার্যকর ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের সময়ও এমন স্লোগান দেখেছি।’
নিহত শহীদুন্নবী জুয়েল
ফ্রান্সের নিন্দায় ওই এলাকায় একটি মানববন্ধন করার কথা ছিল জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিশাত বলেন, ‘অবশ্যই সেখানে ইন্ধনদাতা ছিল। ইন্ধন না থাকলে কারও লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই।’
পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল বলেন, ‘শান্ত হয়ে আসা পরিবেশটা যখন বিশেষ স্লোগানে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখনই বুঝতে বাকি থাকে না ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী বা জামায়াত এখানে যোগ দিয়েছে। তখনই ইউএনওকে বলি ২০১৪-১৫ সালের পরিস্থিতি এসে যাচ্ছে। তদন্ত যেহেতু চলছে তাদের নাম বলব না। তবে এ স্লোগান তাদেরই, এটা সবার কাছে পরিষ্কার।’