রাজধানীতে চিকিৎসা না পেয়ে যমজ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবা আবুল কালাম আজাদ মৃত দুই সন্তান নিয়ে গিয়েছিলেন হাই কোর্টে।
নবজাতকদ্বয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, সকালে তার স্ত্রী সায়েরা খাতুন অসুস্থ বোধ করেন। তাকে মুগদার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নেওয়ার পথে সিএনজির মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম দেন। পরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
ওই সময় হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যমজ শিশু দুটি অপরিপক্ব থাকায় তাদের আইসিইউ দরকার। কিন্তু তাদের হাসপাতালে বেড না থাকায় আইসিইউ আছে এমন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে নবজাতকদের শ্যামলীতে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দীর্ঘক্ষণ সেখানে থাকার পর শিশু হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তাদের আইসিইউ খালি নাই। নরমাল বেডে ভর্তি করতে হবে। এ জন্য দিনে প্রতি শিশুর জন্য ৫ হাজার করে টাকা লাগবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত
ওই সময় আবুল কালাম আজাদ হাইকোর্টের বিচারপতির সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেন। বিচারপতি তার নবজাতকদের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলেন এবং পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে তিনি নবজাতকদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন এবং পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, পরিচালক মিটিংয়ে আছেন। পরে বিচারপতি বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি ক্রিটিক্যাল উল্লেখ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন।
পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একজন চিকিৎসক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতকদের দেখান। তখন চিকিৎসক বলেন, যমজ নবজাতক আর বেঁচে নেই।
এরপর মৃত দুই সন্তানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাইকোর্টে নিয়ে আসেন আজাদ। বিচারপতি পুরো ঘটনা তার কাছ থেকে শুনে স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ নবজাতককে কেন ভর্তি করা হয়নি, তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও শিশু হাসপাতালের পরিচালককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখা দেয়ার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে চিকিৎসা অবহেলায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
নবজাতকের বাবা আবুল কালাম আজাদ সুপ্রিম কোর্টের অফিস সহায়ক (এলএসএস)। তিনি জানান, রাজধানীর মান্ডায় বাসার কাছে কবরস্থানে সন্তান দুটিকে দাফন করা হয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যথাসময়ে হাসপাতালে ভর্তি নিলে হয়তো তার সন্তান দুটি বাঁচত।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক জুলফিকার আহমেদ আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি শুনেছি দুইটি শুরু চিকিৎসা নিতে আসছিল। তারা চিকিৎসকের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে তারা মারা গেছে। আমি নিজে ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। চিকিৎসা না পেয়ে শিশু মৃত্যৃর কোনো ঘোষণা ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো প্রক্রিয়াগত কারণে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে যেহেতু আদালত এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে অবশ্যই আমরা এর ব্যাখা দেব।’
শিশু হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ শাফি আহমেদ মুছা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিশু দুইটি মারা গেছে আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। আদালত কারণ জানতে চাইলে অবশ্যই বলব। আমাদের হাসপাতালে সারাদেশ থেকে রোগী আসে। আইসিইউ আছে চারটি। চাইলেই আইসিইউ খালি করা যায় না। আমরা সবাই সঠিকভাবে সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি।