উৎকণ্ঠা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি।
সোমবার দুপুরের দিকে বারিধারা অভিমুখে হেফাজতের সমাবেশ শান্তিনগর মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে সেখানেই মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে কর্মসূচি শেষ করেন হেফাজত নেতারা।
গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের উপকণ্ঠে দেশটির এক স্কুল শিক্ষকের শিরশ্ছেদ করেন ১৮ বছর বয়সী কিশোর। ওই শিক্ষক মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্লাসে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন দেখিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়।
পরে ফ্রান্সের সরকার ওই স্কুল শিক্ষককে দেশটির সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদকে ভূষিত করে। বিভিন্ন ভবনের গায়ে সেই কার্টুন প্রদর্শনও শুরু করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই কার্টুন প্রদর্শনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেছেন, ‘নিজ দেশে আমি সবসময় কথা বলা, লেখা, চিন্তা ও আঁকার স্বাধীনতার পক্ষে বলব।’
এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা বিক্ষোভ করছেন।
বাংলাদেশে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ চলছিল। তবে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলাম এই প্রথম ঢাকায় কর্মসূচি দেয়।
ঢাকা ‘অচল করার ঘোষণা’ দিয়ে এই ঘেরাওয়ে যোগ দিতে দুই দিন ধরেই নেতা-কর্মীরা আসতে থাকে রাজধানীতে। তারা বেলা ১১টায় বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের সামনে জড়ো হওয়ার কথা জানায়।
নির্ধারিত সময়ের আগেই বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী অবস্থা নেয় বায়তুল মোকাররমের সামনে।
গোলযোগের আশঙ্কায় সেখানে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তবে দুই পক্ষই দেখায় সহনশীল মনোভাব।
ঘেরাও করতে মিছিল পূর্ব সমাবেশে হেফাজত নেতারা ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন, ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি, ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।
হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি জানাই যারা আমাদের নবীর সাথে বেয়াদবি করবে, তাদের বিরুদ্ধে সংসদে মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস করতে হবে। ফ্রান্সের সাথে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। বাংলাদেশে ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফরাসি দূতাবাস বন্ধের দাবি, ঘেরাওয়ের ডাক
দাবি আদায়ে ভবিষ্যতের কর্মসূচি আরও জোরাল হবে জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সরকার আরও ১০০ বছর থাকুক। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ করে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সাংবাদিক, গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি। আপনাদের কথা রক্ষা করে এখানেই থেমে গেলাম। প্রয়োজনে আগামী কর্মসূচিতে এখানে থামব না। ফ্রান্সের দূতাবাসকে টুকরো টুকরো করিয়ে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ।
‘ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আমরা মাঠে নেমে গেছি। হেফাজতে ইসলামের আরও দাবি আছে, সেগুলো পূরণ করতে হবে।’
হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ফ্রান্সের ক্ষমা চাইতে হবে। ২০০ কোটি মুসলমানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করে দিন। সরকার যদি আমাদের এই দাবি না মানে তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবে।’
পৌনে এক ঘণ্টা সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে বারিধারা অভিমুখে রওয়ানা হয় কয়েক হাজার মানুষ। তারা ফ্রান্স ও মাখোঁর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড বহন করে এ সময়।
বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে সেখানে দাঁড়িয়ে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন হেফাজত নেতারা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আগে থেকেই কথা হয়েছিল, শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে তারা সমাবেশ শেষ করবে।’
কর্মদিবসে হেফাজতের এই ঘেরাওয়ের কারণে রাজধানীর বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সকাল থেকেই এই অংশে গাড়ি বন্ধ করে দেয়ার প্রভাব পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে। এতে অফিসগামী যাত্রীবা তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে।
একই সময় আবার মালয়েশিয়া ফেরার দাবিতে হাইকোর্ট এলাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করে প্রবাসীরা। একই সঙ্গে দুই কর্মসূচির কারণে যানজট পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়।