তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার হওয়া চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে কারা অপহরণ করেছিল তা এখনও জানা যায়নি।
সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রামের স্টাফ রিপোর্টার সরোয়ার বলেন, ‘আমি পাঠাওয়ের বাইকে করে বুধবার রাত ১১টায় নগরীর কাজির দেউড়ি আলমাস সিনেমার পাশ থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম। ভিআইপি টাওয়ারের সামনে হঠাৎ জোর করে একজন বাইকের পেছনে উঠে পড়ে। তারপর আমাকে হেলমেট পরিয়ে দেয়। এরপর আর কিছুই মনে ছিল না আমার।’
তবে তিনি বলেন, ‘আমাকে চারজন অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে এমনটা বুঝতে পারি। যেখানে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে ট্রেনের শব্দ শুনতে পেতাম।’
যারা তাকে অপহরণ করেছিল তাদের মোবাইল ফোনে বলতে শোনেন, ‘সাংবাদিকদের শিক্ষা দেয়ার জন্য সরোয়ারকে তুলে এনেছি, হত্যার জন্য নয়।....ও সাংবাদিক, খবরদার ওকে হত্যা করা যাবে না।’
সরোয়ার আরও জানান, অপহরণকারীরা বার বার ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। মোবাইলের অপর প্রান্তের লোককে তারা ‘স্যার’ ডাকছিলেন।’
তুলে নেয়ার পর তাকে লোহার রড, লাঠি ও গাছ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। অপহরণকারীরা মারতে মারতে তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন— ‘আর নিউজ করবি?’, জানান সারোয়ার।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা বাজার এলাকার একটি খালের পাড় থেকে তাকে উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আলাউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে এক জন ব্যক্তিকে ফেলে যেতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। তখন ওই ব্যক্তি অচেতন ছিলেন। পরে তাকে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যায়।’
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকী তাকে শনাক্ত করেন। পরে রাতে নয়টার দিকে সাংবাদিক সরোয়ারকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ওমর আলী বলেন, ‘সরোয়ারের ইসিজি করা হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ আছেন।’
এর আগে রাত থেকে খোঁজ না মেলায় বৃহস্পতিবার রাতে কোতয়ালি থানায় জিডি করেন আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জোবায়ের সিদ্দিকী।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘সাংবাদিক অপহরণের বিষয়ে যে বা যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনতে যা যা করণীয় সব করা হবে। এ বিষয়টি আরও তদন্তের ব্যাপার আছে।’
তিনি আরও বলেন, পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি খুঁজছে। অপহরণের পর নগরের কাজীর দেউড়ীর ভিআইপি টাওয়ার থেকে যে যে পথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে পথের বিভিন্ন পয়েন্টে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও সরোয়ারের কল লিস্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।