তখন ব্রিটিশ আমল। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্রায় পুরোটা ও নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের জোতদার ছিলেন শিরিষ চন্দ্র ও সতিশ চন্দ্র। জোতদারি সীমানায় বসবাসকারীরা খাজনা দিতেন তাদের।
এরপর দেশ ভাগ হয়েছে কিন্তু জোতদারদের রেখে যাওয়া সীমানা জটিলতায় এখনও ভুগছে এলাকার পাঁচ গ্রামের মানুষ। এই পাঁচটি গ্রাম এখন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের অধীন, কিন্তু মানচিত্রগত অবস্থান পাশের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের অভ্যন্তরে।
ফলে যুগ যুগ ধরে চলছে নানান প্রশাসনিক জটিলতা। এত বছরেও পাঁচ গ্রামের তিন হাজারের বেশি মানুষের বঞ্চনা দূর করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। অন্য উপজেলার সুযোগ সুবিধা নিলেও তারা ভোট দিচ্ছেন আরেক উপজেলায়। নিজ দেশেই মেনে নিতে হচ্ছে অনেকটা ছিটমহলবাসীর জীবন।
পাঁচটি গ্রামের মধ্যে কৈকুড়ি গ্রামে ২২৫টি খানা, বড়ভিটা গ্রামে ১৫০টি খানা, মরাদিগদারী গ্রামে ৭০ খানা, টেংনার ভিটা গ্রামে ১০০ খানা এবং দিগদারী গ্রামে ৫৫ খানা রয়েছে।
কৈকুড়ি গ্রামের আহম্মেদ হোসেন (৮৫) নিউজবাংলাকে বলেন, এখানে পাঁচ গ্রামের প্রায় সোয়া তিন হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৮০০। বন্যা হলেই আমাদের ভিতরবন্দে আশ্রয় নিতে হয়। সাহায্য সহযোগিতা সেখানকার মানুষই করে, কিন্তু আমরা আরেক ইউনিয়নের বাসিন্দা।’
এসব এলাকার মানুষের লেখাপড়া, বিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-সালিশ, বন্যায় আশ্রয় গ্রহণ সবকিছুই চলে ভিতরবন্দকে আশ্রয় করে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের ইউনিয়ন ভোগডাঙ্গা। ফলে সামাজিক বেষ্টনির সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বেশিরভাগ মানুষ।
বিল দিয়ে বিচ্ছিন্ন এ এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল। ফলে রোগী পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যা তীব্র। দীর্ঘদিন বঞ্চিত এসব গ্রামের মানুষ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিবর্তন করে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দেই ঠিকানা পেতে চান।
কৈকুড়ি ছামিনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চারদিকে ভিতরবন্দ। এখানকার মানুষের অবস্থা ছিটমহলবাসীর মতো। আমরা ভিতরবন্দের বাসিন্দা হতে চাই।’
তবে এ কথা মানছেন না ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর ইসলাম।
নিউজবাংলার প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কে কী বলেছে জানি না। তবে ওই এলাকার অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষ আছেন যারা আমার ইউনিয়নে থাকতে চায়। এখনও অনেকে ফোন করে আমাকে জানান, তারা ভিতরবন্দ ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। আমরা ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে দেশ স্বাধীনের আগে থেকে আছি, এখনও এই ইউনিয়নে থাকতে চাই।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। দুই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাঁচটি গ্রামের মানুষ খুবই দুর্ভোগে রয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার মাধ্যমে এর সমাধান হওয়া উচিত।