পাইলিংয়ের জন্য বসানো হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রেন। এক্সক্যাভেটর দিয়ে চলছে মাটি কাটার কাজ। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ রড তুলছেন। আবার কেউ করছেন সেন্টারিংয়ের কাজ। ঢালাইয়ের কাজেও ব্যস্ত দেখা গেছে অনেক শ্রমিককে।
নগরের যানজটপ্রবণ ইপিজেড এলাকায় গেলে চোখে পড়বে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। ৩১ অক্টোবর প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেল, নানা কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা।
শুধু ইপিজেডে নয়, এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ চলছে পতেঙ্গা সৈকত থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার জুড়ে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দিনরাত কাজ করছেন দেশি-বিদেশি হাজারও শ্রমিক।
চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত দীর্ঘ এ উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে সিডিএ এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে চার ধাপে। ইতিমধ্যে দুই ধাপের ভৌত কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশের আপত্তির কারণে বাকি দুই ধাপের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাই সড়কের মাঝ দিয়ে নির্মাণযজ্ঞের কারণে নগরবাসী যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, সেটি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
ইপিজেড এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক লোকমান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে, এজন্য রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। তবে এটি নির্মাণ হলে যানজট আর থাকবে না বলে এ কষ্ট সহনীয়।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, প্রথম ধাপে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তাই বিমানবন্দরের পরিবর্তে পতেঙ্গা সৈকতে গিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামাতে হয়েছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপের কাজ অনেকদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রথম দুটি ধাপের সব জটিলতা কেটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, তৃতীয় ধাপের নিরাপত্তা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তি ছিল। তাই প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চতুর্থ ধাপে কাজ করার জন্য ট্রাফিক বিভাগ এখনও অনুমতি দেয়নি। ট্রাফিক বিভাগের শর্ত হচ্ছে, ওই অংশের দুইটি সংযোগ সড়ক আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পিসি রোডের কাজ শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা যাবে। ইতোমধ্যে এক্সেস রোডের কাজ ৮০ শতাংশ ও পিসি রোডের কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। এ কারণে শেষ দুই ধাপের এখনও কাজ শুরু হয়নি। ডিসেম্বরে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৬ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কেটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভৌত কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।