বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুড়িমারীর বর্বরতায় চুপ কেন সবাই

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২০ ০৮:২৪

‘ক্ষমতাসীন বলেন আর বিরোধী দল বলেন, এদের কারো ব্যাকবোন (মেরুদণ্ড) নেই। ধর্ম ও এর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে এদের মধ্যে দুর্বলতা আছে।… আজ চুপ থাকলে কাল আপনাদেরও পুড়ে মরতে হবে। এটা একটা খেলা হয়ে যাবে।’

বুড়িমারীতে গা শিউরে ওঠা বর্বরতা নিয়ে ‘বিস্ময়কর’ নীরব রাজনৈতিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মূলধারার দলগুলো পুরোপুরি চুপ। এমনকি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সেভাবে কথা বলেনি ঘটনাটি নিয়ে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মুখে ‘রা’ নেই। বুড়িমারী হত্যার পর দিন সারা দেশে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভে বুড়িমারী নিয়ে একটি কথাও বলেননি নেতারা।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী বাজারে শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ২৯ অক্টোবর রাতে। সেই রাতে ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পর দিন সামনে আসে সব কিছু।

হামলার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ পর্যন্ত অন্তত দুটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন বা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু বুড়িমারীর ঘটনা নিয়ে একটি কথাও বলেনি।

৩১ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১১ নেতার ভার্চুয়াল বৈঠকের পরের বিবৃতিতেও নেই বুড়িমারী প্রসঙ্গ।

বিবৃতিতে ফ্রান্সে মহানবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভে সমর্থন নিয়ে হত্যার সমালোচনা করে বিএনপি। বলা হয়, হত্যা-সহিংসতা মহানবীর শিক্ষার বিরুদ্ধে।

ফ্রান্সে হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেও লালমহিরহাটের ঘটনায় নীরব কেন?- এমন প্রশ্ন শুনে কথা বলার আগ্রহই হারিয়েছেন বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামালউদ্দিন বলছেন, ‘সবাই না জানার ভাণ করছে, গা বাঁচাতে চাইছে।’

মানবধিকারকর্মী নুর খান লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ম খুব সংবেদনশীল ব্যাপার। তারা সাহস পাচ্ছে না এটা নিয়ে মন্তব্য করার।’

নির্মম এই ঘটনাটি নিয়ে সরকারি দলে প্রতিক্রিয়া নেই কেন?- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আমি জানিই না। আপনার কাছে যা শুনলাম, তাতে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

দল থেকে কোনো নিন্দা জানানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, এ বিষয়ে দলের কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও হয়নি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্রিফিংয়ে পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’

কিন্তু সেখানে তো ফ্রান্সে হত্যার কথা বলা হয়েছে, লালমনিরহাট নিয়ে কথা হয়নি- এমন মন্তব্যের পর মোশাররফ বলেন, ‘আমি শুনতে পাচ্ছি না।’

পরে আবার কল করলে তিনি বলেন, ‘আপনি পরে ফোন দেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য সামসুদ্দিন দিদার অবশ্য আগেই বলেছিলেন, ‘বিএনপির কেউ এটা নিয়ে কথা বলবে কি না, আমি বুঝতে পারছি না। মনে হয় না কেউ কথা বলবে।’

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নির্বাচনি এলাকা লালমনিরহাট সদর। ওই জেলাতেই এমন একটি ঘটনা। কিন্তু দাবি করেছেন, তিনি বিভ্রান্ত।

এ জাপা নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আসলে এই ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি। একেকজন একেক রকম করে বলছেন। তবে তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা খুবই নিন্দনীয়। এ রকম বিচারবহির্ভূত কাজ কারো জন্যই কাম্য নয়। সরকার হয়ত সেভাবেই ব্যবস্থা নেবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামালউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন বলেন আর বিরোধী দল বলেন, এদের কারো ব্যাকবোন (মেরুদণ্ড) নেই। ধর্ম ও এর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে এদের মধ্যে দুর্বলতা আছে।’

‘ধর্ম অবশ্যই সেনসিটিভ ইস্যু’- এই বিষয়টি উল্লেখ করে চুপ থাকার বিপদও জানান এই সমাজবিজ্ঞানী। বলেন, ‘আজ চুপ থাকলে কাল আপনাদেরও পুড়ে মরতে হবে। এটা একটা খেলা হয়ে যাবে।’

শহীদুন্নবী জুয়েল

ব্যতিক্রম এম এ মতিন

সবাই যখন চুপ, তখন সামনে এসে কথা বলেছেন ইসলামিক ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন। তিনি শনিবার বিকালে শাহবাগে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

নিউজবাংলাকে এক এম মতিন বলেন, ‘আমি মিডিয়াতে দেখলাম, এই যে ঘটনা ঘটল, লোকটাকে হত্যা করা হলো, আমি ভাবলাম, সত্য কথাটা তো বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ওই ব্যক্তির মানসিক সমস্যা ছিল। কাজেই তার হিতাহিত জ্ঞান নেই। তিনি কী করবেন, তার ওপর তো শরীয়তের বিধানই নেই।

‘বিধান হচ্ছে, কারও হাত থেকে কোরআন পড়ে গেলে তিনি কাফফারা দেবেন। আর ইচ্ছাকৃত ফেলে দিলে তিনি তওবা করবেন। কিন্তু তাকে হত্যা করতে হবে কেন?’

এম এ মতিন বলেন, ‘যারা এই কাজ করেছে, তারাই ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে।’

কোনো দল এটা নিয়ে কথা বলছে না- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে সবার কথা বলা উচিত।’

সেই স্লোগান নিয়ে জামায়াত কী বলছে?

গত এক সপ্তাহে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে গণমাধ্যমে। একটি মিরপুরের নতুনবাজার বস্তিতে আগুন আর অপরটি তুরস্কে ভূমিকম্পে শোক জানিয়ে।

তবে বুড়িমারীর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া নেই দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক দলের।

কারণ কী?

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য দাবি করেছেন, তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

জামায়াতের সব বিবৃতি ইমেইলে এলেও এ বিষয়ে বিবৃতি কেন আসছে না- এমন প্রশ্নে পরওয়ার বলেন, ‘আমরা কী বিবৃতি দেই, সেটা কোথায় ছাপা হয়, সেটা আপনাদের সাংবাদিকদের দেখার টাইম আছে নাকি?’

তবে জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাতেও ৩০ নভেম্বর বুড়িমারী বর্বরতা নিয়ে জামায়াতের কোনো বিবৃতি ছাপা হয়নি। ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি শেষে রোববার প্রকাশিত পত্রিকাতেও আসেনি তা।

‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল’, ‘ইসলামের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল’ –এমন স্লোগান দিয়ে খুন করে মরদেহ পোড়ানো হয়েছে শহীদুন্নবীকে।

এই স্লোগান দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী। অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে এগুলো ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে।

দেশের পশ্চিম সীমান্তের ওই এলাকায় জামায়াতের প্রভাব আগে থেকেই। শহীদুন্নবীকে প্রথমে যিনি মারধর করেছিলেন বলে তথ্য মিলেছে, সেই আবুল হোসেন জামায়াত সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

হত্যার সময় দেয়া স্লোগানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরওয়ার বলেন, ‘একটা লোক কোথা থেকে কী স্লোগান দিল, কোত্থেকে কে শুনল, আপনি কী শুনলেন, তাতে আমাদের কী?’

“আওয়ামী লীগ ‘জয় বাংলা’ বলে যদি ‘নারায়ে তাকবির’ লাগিয়ে দেয় দোষ আছে?”- এমন মন্তব্যও করেন পরওয়ার।

মানবাধিকার সংগঠনেও প্রতিক্রিয়া কম

ঘটনার পর দিন ৩০ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে বলে, ‘ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে এমন নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা কোনো সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে না।’

আরেক মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এই ঘটনায় কোনো বিবৃতি, বক্তব্য কিছুই দেয়নি।

ঘটনার দুই দিন পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি কমিটি গঠন করে বুড়িমারী পাঠায়।

মানবাধিকার সংগঠনের কী হয়েছে- এমন প্রশ্নে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নুর খান বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক দল নয়, মানবধিকার সংগঠন বলেন, সাধারণ জনগণ বলেন, সব জায়গায় একই চিত্র। তাই এত নির্মম ঘটনার প্রেক্ষিতেও কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর