ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের অবৈধ দখল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলাতেও খুঁজে পেয়েছে প্রশাসন। মেঘনাঘাট এলাকায় দখল করা প্রায় ১৫ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলার চর রজমজান সোনাউল্লা এলাকায় চার একর ৩৯ শতাংশ সরকারি খাস জমিটি দখল করা হয়েছিল হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের নামে।
ওই এলাকায় মদিনা গ্রুপ একটি সিমেন্ট কারখানা গড়ে তুলছে। এ জন্য কিছু জমি কেনা হয়েছে। তবে বড় অংশই সরকারি খাস জমি। যেগুলো অনুমোদন ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছিল।
- আরও পড়ুন: দখল ও চাঁদাবাজিতে ইরফানের ১২ ক্যাডার
দখল করা জমিতে নিজস্ব একটি পাওয়ার স্টেশন গড়ে তুলেছিল মদিনা গ্রুপ। তার কয়েকটি বড় বড় গুদামও ছিল। একটি গুদামে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি রাখা ছিল। কয়েকটি গুদাম ছিল ফাঁকা।
এর বাইরে ফাঁকা জমিতে রাখা হতো কয়লা, বালু, ট্রাক।
রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় কয়েকটি স্থাপনা। বাকিগুলো তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
- আরও পড়ুন: কোথাও নেই হাজী সেলিম
নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গত ২৬ অক্টোবর ইরফান সেলিমকে গ্রেফতারের পর তার বাবা হাজী সেলিমের দখলদারিত্বের বিষয়টি আবার সামনে আসে।
প্রকাশ হয়, পুরান ঢাকায় বহু সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা, বাড়ি দখল করেছেন এই সংসদ সদস্য।
১৯৪৭ সাল থেকে হাবীব ব্যাংক এবং বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের জমি স্ত্রীর নামে গত এপ্রিল দখল করেন হাজী সেলিম। দখলদার উচ্ছেদে সরকার বুলডোজার ব্যবহার করে। আর সে সময় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের জমি দখল করতে বুলডোজার ব্যবহার করেন হাজী সেলিম।
২৭ অক্টোবর সে জমি দখলমুক্ত করে নিজেদের আয়ত্বে ফিরিয়ে আনে অগ্রণী ব্যাংক।
- আরও পড়ুন: জমি দখল হাজী সেলিমের স্ত্রীর নামেও
এরপর প্রকাশ পায়, সরকারি বধির স্কুলকে দেয়া জমিতে হাজী সেলিমের কারণে স্থাপনা তৈরি করা যায়নি। স্কুলের জমিতে সিএনজি স্টেশন তৈরি করে ব্যবসা করেছেন।
পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের তিব্বত হলের দখলমুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। ২০০১ সালে ওই স্থাপনার অবকাঠামো পাল্টে স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নাম দিয়েছেন হাজী সেলিম।
- আরও পড়ুন: হাজী সেলিমের ‘দখল’: জবি ছাত্রদের বিক্ষোভ
চলতি বছরের শুরুর দিকে বুড়িগঙ্গার তীর দখলের তথ্যও জানা যায় সেলিমের বিরুদ্ধে। বিআইডব্লিউটিএ তখন গুড়িয়ে দেয় বেশ কিছু স্থাপনা।
এবার ঢাকা থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরেও হাজী সেলিমের দখলদারিত্বের খবর পাওয়া গেল।
সরকারি জমি উদ্ধারের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা বলেন, ‘হাজী সেলিম মদিনা গ্রুপের নামে সরকারি জমি দখল করে রেখেছিল। সেই জমি উদ্ধার করা হয়েছে।’
- আরও পড়ুন: বধির স্কুলের জমি হাজী সেলিমের দখলে
এই কর্মকর্তা জানান, জমিটি বরাদ্দ চেয়ে ২০১৮ সালের আবেদন করেছিলেন হাজী সেলিম। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন। কিন্তু অনুমতি না পেলেও নিজের মতো করে জমিটি ব্যবহার করতে থাকেন সংসদ সদস্য।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে স্থাপনাগুলো পেরেছে সেগুলো ভেঙে দিয়েছি। কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে ভারী। সেগুলো নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে বলে এসেছি।’
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের অবৈধ যতগুলো স্থাপনা ছিল সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। যে জায়গাগুলো আমার দখলমুক্ত করেছি আমরা সেসব স্থানে লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
সন্তানকে গ্রেফতারের পর থেকে প্রতাপশালী হাজী সেলিম এক অর্থে উধাও হয়ে গেছেন। তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না।