বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে রংপুরের শহীদুন্নবী জুয়েলকে প্রথম মারধর করার অভিযোগ উঠেছে যার বিরুদ্ধে সেই আবুল হোসেন (৩৮) এখন সপরিবারে উধাও। শুক্রবার রাতের পর এলাকায় দেখা যায়নি তাকে। বন্ধ মোবাইল ফোন।
স্থানীয়রা জানান, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন শুক্রবার এশার নামাজ পড়েছেন বুড়িমারী মসজিদে। তারপর থেকে এলাকায় তাকে দেখা যায়নি।
শনি ও রোববার কয়েক দফা তার বাড়িতে গিয়ে তাকে বা পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। পাশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার থেকেই বন্ধ আবুল হোসেনের দোকান।
বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী নিউজবাংলাকে জানান, মসজিদে শহীদুন্নবীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর তাকে মারধর শুরু করেন আবুল হোসেন। পরে তিনি বাজারে গিয়ে প্রচার করেন, শহীদুন্নবী কোরআন পদদলিত করেছেন।
অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় নিউজবাংলার।
ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড রাগের মাথায় শহীদুন্নবীর বাম গালে দুটি থাপ্পড় দিয়ে মসজিদের বাইরে বের করে আনি, সে সময় ভাবতে পারিনি পরিস্থিতি এমন হবে।’
আবুল হোসেন বুড়িমারী ইউনিয়নের বাড়ি এক নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুরে। তিনি বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
আবুল হোসেন বলেন, ‘সেদিন আসরের নামাজ শেষে মসজিদের সামনে বুড়িমারীর বড় রেজোয়ানের (রেজোয়ান বুড়িমারী বাজার সমিতির সভাপতি ও মসজিদ কমিটির সম্পাদক) ছেলে রিয়াদ (৩৩), তার দুই ম্যানেজার এবং আরেক অপরিচিত উপস্থিত ছিলেন।
‘মসজিদের ভেতরে খাদেম জুবেদ আলীর সঙ্গে শহীদুন্নবীর বাকবিতণ্ডার শব্দ পেয়ে আমি এগিয়ে যাই। আমার সামনেই খাদেমকে গালিগালাজ করছিল জুয়েল। আমি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি একেক সময় একেকটা পরিচয় দেন। এ সময় আমি প্রচণ্ড রাগের মাথায় তার বাম গালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে মসজিদের বাইরে নিয়ে এসে বারান্দার সিঁড়িতে বসিয়ে নাম-ঠিকানা জানতে চাই। ’
আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহীদুন্নবীর সঙ্গী অপর ব্যক্তি (সুলতান জোবায়ের আব্বাস) আমাদের জানায় তারা রংপুর থেকে এসেছে। এ সময় একজন-দুইজন করে প্রায় ২৫/৩০ জন মানুষ জড়ো হয়। আমি প্রথমে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করি। তিনি বাইরে থাকার কথা জানিয়ে হাফিজুল ইসলাম মেম্বারকে ডাকতে বলেন। এরপর ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলামকে ফোন করে ডেকে আনি এবং দুজনকে মোটরসাইকেল, খাতা-কলম ও দুটি জ্যাকেটসহ তাদের হাতে তুলে দেন। এরপর পরিস্থিতি এমন হবে আমি ভাবতে পারিনি। আমি নিজেও এমন ঘটনা পছন্দ করি না।’
গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, ‘মেম্বারের হাতে ওই ব্যক্তিদের তুলে দেয়ার পরই মসজিদ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রধান আসেন। পরে তিনিও ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু কীভাবে কথাগুলো ছড়িয়ে পড়ল এবং মানুষ জড়ো হলো আমি বলতে পারি না বা জানি না। মেম্বারের হাতে ওই দুই ব্যক্তিকে তুলে দেওয়ার পর আমি আর ওদিকে যাইনি।’
- আরও পড়ুন: বুড়িমারীর উন্মত্তরা ‘বহিরাগত’
বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বৃহস্পতিবার বিকেলে তর্কাতর্কির পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শহীদুন্নবীকে। পরে তার দেহে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
নিহত শহীদুন্নবী (৫০) রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। তার সঙ্গী সুলতান জোবায়েরের বাড়িও রংপুরে।
এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক জনকে।
লালমনিরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল বি) তাপস কুমার রায় রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে খুঁজছে পুলিশ। তবে তার অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি।