বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুড়িমারীর উন্মত্তরা ‘বহিরাগত’

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২০ ১৮:০৪

“তিনি (স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান) তার ভাষণে বলেছেন, ‘আপনারা যারা সামনে আছেন আমি তো তাদের কাউকে চিনতে পারছি না, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? আপনাদেরতো আমি চিনি না’।”

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী মসজিদে তর্কাতর্কির জেরে শহীদুন্নবীকে যারা পিটিয়ে হত্যা করে পুড়িয়ে দিয়েছেন, তারা এলাকায় পরিচিত মানুষ নন।

এ কথা জানিয়েছেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরন নাহার। জানান, সেদিন আক্রান্ত হয়েছিলেন তারাও। 

বৃহস্পতিবার পাটগ্রামের বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ভেতর তর্কাতর্কির জেরে রংপুর থেকে সেখানে যাওয়া শহীদুন্নবীকে রক্ষা করতে না পারলেও তার সঙ্গীকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেত সক্ষম হন কামরুন নাহার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

 

ঘটনার দুদিন পর গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সেদিনের ঘটনাপ্রবাহ জানান কামরুন।

পাটগ্রামের ইউএনও কামরুন নাহার

 

এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, তিনি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেদিন আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের। পরিস্থিতি শান্তও হয়ে এসেছিল।

ইউএনও জানান, যখন তিনি ঘটনাস্থলে যান, তখন ছয় থেকে সাতশর মতো লোক ছিল।

 

কিন্তু হঠাৎ স্রোতের মতো অচেনা মানুষ এসে সব ঘোলাটে করে ফেলে।

শহীদুন্নবীকে হত্যার পর তার গায়ে ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয় 

 

পাশে বসা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দেখিয়ে কামরুন নাহার বলেন, ‘সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা বেশিরভাগই ঐ বুড়িমাড়ির লোক নন; স্থানীয় লোক নন বলে আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন।’

ইউএনও বলেন, “তিনি তার ভাষণে বলেছেন, ‘আপনারা যারা সামনে আছেন আমি তো তাদের কাউকে চিনতে পারছি না, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? আপনাদেরতো আমি চিনি না’।”

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়েও বাঁচানো যায়নি শহীদুন্নবীকে

 

‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব যখন চেনেন না তখন তাদেরকে বহিরাগত বলা যায়’- বলেন ইউএনও।

ইউএনও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। আমরা মাইক এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

‘তারা শান্তও হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে লোকজন আসতেই থাকে। মাঠ ভরাট হয়ে যায়। যখন এরকম দলে দলে আরও মানুষ আসতে থাকল, ‘নারায়ে তাকবির’ ধ্বনি বেড়ে যেতে লাগল।

‘তখন সাউন্ড সিস্টেম দিয়েও আমাদের কণ্ঠস্বর আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছিলাম না।

‘যখন মানুষের মধ্যে এই ধরনের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় সেটা প্রশমিত করা সহজ ব্যাপার নয়।’

হামলাকারীরা লোহার ফটকও ভেঙে ফেলে সেদিন

 

জেলা সদর থেকে দূরত্বের কারণে বিজিবি আসতে একটু সময় লেগেছিল। আর এই সময়ে তারা হামলাকারীদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন বলে জানান ইউএনও।

বলেন, ‘আমাদের উৎসুক জনতা এবং আমাদের যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার যে অপ্রতুলতা আর সাহায্য চাইলেই চট করে আসে না।’

‘এত বড় ক্রাউডকে (ভিড়) এটা আসলে অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে সম্ভব নয়।’

প্রশাসন যেতে না পারলেও অন্য এলাকা থেকে অচেনারা কীভাবে এল?- এমন প্রশ্নে ইউএন বলেন, ‘এটা আমি আপনাদেরকে ওভাবে বলতে পারব না। মানুষের যাতায়াত তো সীমিত করা হয়নি। এই এলাকায় যেতে হলে এই অনুমতির প্রয়োজন হবে- এরকম তো কোনো আইন নাই।

 

ইউএনও জানান, তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একজনকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল ব্যাংকে নিয়ে যান। তখন সেখানে তাদের ওপরও হামলা হয়। এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘তারা মনে করেছে দুজন ব্যাক্তিকে নিয়েই আমরা বের হয়ে গেছি। এজন্য তারা আমাদের পিছু নিয়েছিল।’

উদ্ধারের কাজটা আগে করা যেত কি না, এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘রেসকিউ করার মতো সিচুয়েশন ছিল না। আমার ফোর্স ছিল না। ফোর্স থাকলে আমি সেখান থেকে রেসকিউ করতে পারতাম। আমার পথও ছিল না।’

নিহত শহীদুন্নবী

 

সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় লেগেছে কি না, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে কোনো সময় লাগেনি। আমার জনরোষের ওপর ভিত্তি করে আমাকে কাজ করতে হয়।’

গুলি করার আদেশ না দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে কামরুন নাহার বলেন, ‘আমি কোনো মানুষকে হার্ট করতে পারব না, আঘাত করতে পারব না। যেমন ভেতরের দুজনকে আমার দেখার কথা, বাহিরের হাজার হাজার মানুষকেও আমার দেখতে হবে। এবং সেটার প্রেক্ষিতে আমি সময়ের আগেই ফায়ার ওপেনের নির্দেশনা নিশ্চিতভাবেই দেব না।

আরও পড়ুন: ওষুধ কিনতে গিয়ে নির্মমতার শিকার শহীদুন্নবী

 

‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যে ফায়ার ওপেনের নির্দেশনা যাতে আমাকে না দিতে হয়।

‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির কারণে আমাকে সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে এবং আমি ফায়ার ওপেনের নির্দেশনা দিয়েছি।’  

এ বিভাগের আরো খবর