ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন কাচারির গাঁ ঘেষে ছোট একটি টঙে চায়ের দোকান মাসুম মিয়ার। বৃদ্ধ মা, এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সংসার। আয়ের উৎস এই একটিই। দিনে আয় হয় ছয় থেকে সাতশ টাকা।
এখন স্বস্তি থাকলেও গত এপ্রিল মে মাসে কষ্টের সময় গেছে মাসুমের। কারণ, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বন্ধ করে দিতে হয় দোকান।
মাসুম বলেন, ‘কিছু টেকাপয়সা জমায়া রাখছিলাম। বইয়া বইয়া (বসে বসে) খাইছি। শেষ হয়া যাওনের পরে রেন (ঋণ) করছি। মেলা কষ্টের দিন গেছে। আর যানি হেই দিন না আয়ে।’
গত ৮ মার্চ করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মাসের শেষে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। দিনে আনে দিনে খায়, এমন মানুষরা পড়ে বিপাকে। তাকিয়ে থাকতে হয় অনুদান ও ত্রাণ সামগ্রীর দিকে।
তবে ধীরে ধীরে আবার চালু হচ্ছে সব। তাই মাসুমরা আপাতত স্বস্তিতে।
শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ফিরে পাচ্ছেন তাদের আয়ের উৎস।
শহরের এডভোকেট আলী আজম ভূঞা সড়কে গাছের চারা বিক্রি করছেন ইয়াসিন মিয়া। বলেন, ‘লকডাউনের সময় ব্যবসা বন্দ হয়া যায়। মা-বাপরে নেয়া অনেক কষ্ট করছি। দিনে চাইর-পাচশ টেহা আয় হরতাম। খায়া না খায়া দিন কাটাইছি। অহন আবার বেচাবিক্রি শুরু অইছে।’
সড়ক বাজারের ভ্যান গাড়িতে জুতা বিক্রেতা বিমুল ঋণি জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে যে সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে, তা শুনেছেন তিনি। তবে কামনা করছেন, এই পরিস্থিতি যেন আর না আসে।
শ্রমজীবীদের মনে আতঙ্কের কারণ, প্রথম দফা লকডাউন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগের হাতেই জমানো কিছু টাকা ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। আর সে সময় ধার কর্জও পাওয়া গেছে। কিন্তু আবার এই পরিস্থিতি তৈরি হলে তা পাওয়া যাবে কি না এ নিয়েও তারা চিন্তিত।
নুরুল ইসলাম নামের এক ভ্রাম্যমাণ ফাস্টফুড বিক্রেতা একটি বেসিরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবেও কাজ করেন। তিনি আশা করছেন পরিস্থিতি খারাপ নয়, ভালো হবে আরও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, করোনা আঘাত হানার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে, ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে চাল। পরিস্থিতি আবার খারাপ হলে আবার সহায়তা করা হবে।