রাজধানী ঢাকায় প্রশাসনের অভিযানে ক্যাসিনো বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েক মাস। হোতারাও এখন জেলে। তবে উপকণ্ঠে জমজমাট জুয়ার আসর।
সাভারের আশুলিয়ায় জুয়ার অভিনব যন্ত্রটি ‘চায়না গেমস’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন ‘মিনি ক্যাসিনো’।
আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিদিনই এসব মিনি ক্যাসিনোতে ভিড় জমছে। আর অর্থ হেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গত শনিবার রাতে আশুলিয়ার কাঁইচাবাড়ী এলাকায় র্যাব অভিযান চালিয়ে ‘মিনি ক্যাসিনো’ আস্তানা থকে ২১ জনকে আটক করে। সেখানে ‘চায়না গেমস’ নামে যন্ত্র ছিল।
সম্প্রতি একটি চায়না গেমসের আস্তানা থেকে আটক করা হয় ২১ জনকে
- আরও পড়ুন: বাইরে ক্যারম বোর্ড, ভেতরে মিনি ক্যাসিনো
তবে নয়ারহাট, পশ্চিম বাইপাইল, বলিভদ্র, পলাশবাড়ী, জামগড়া, কবিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০ থেকে ১৫টি স্পটে মিনি ক্যাসিনো বসানোর তথ্য আছে। যদিও গত শনিবারের অভিযানের পর সেগুলো বন্ধ রয়েছে।
শাখা সড়কের পাশে দোকান ভাড়ায় বসানো হয়েছে এসব মেশিন। অভিযোগ আছে, প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৈনিক ও মাসিক হারে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয় এসব মিনি ক্যাসিনোর মালিকরা।
‘চায়না গেমস’ পরিচালনার এই অঞ্চলে তিন থেকে চারটি গ্রুপ রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, যাদের একটি গ্রুপের প্রধান প্লাবন হোসেন।
নয়ারহাট, জামগড়া ও ডেন্ডাবর নতুন পাড়া এলাকায় তার তিনটি ক্যাসিনো রয়েছে।
কাঁইচাবাড়ী এলাকায় মো. জুয়েলের রয়েছে একটি।
পশ্চিম বাইপাইল, বলিভদ্র ও জামগড়া মনির মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানের মিনি ক্যাসিনো হোতা সাদ্দাম হোসেন।
গত ২৪ অক্টোবর সাভারে ‘চায়না গেমসের’ একটি আস্তানায় র্যাবের অভিযানর্যাবের তালিকায় ঈসমাইল হোসেন ও ওমর ফারুক নামে আরো দুইজনের নাম রয়েছে। তারা এখনো পলাতক।
এসব এলাকার বাসিন্দারা জানায়, দল বেঁধে এখানে খেলতে আসে জুয়ারিরা। দিন-রাত অবধি চলে আসর। মাঝে মধ্যে পুলিশ আসলেও পরদিন ঠিকই চলে বোর্ড। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আল-আমিন নিয়মিত খেলেন। নিউজবাংলাকে তিনি জানানন, এই ইলেকট্রিক বোর্ডে তার প্রচণ্ড আসক্তি।
প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জুয়া খেলেছেন আল আমিন। বেশিরভাগ সময়ই হেরেছেন। স্ত্রীর গয়না, নিজের ও ছোট ছেলের সাইকেলও বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন। তারপরও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এলাকা ছাড়তে হয়েছে তাকে।
- আরও পড়ুন: অনলাইন ক্যাসিনো ঠেকানো যাচ্ছে না
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বায়িং হাউজের এক কর্মকর্তা জানান, চায়না গেমসে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় দিতেন। এতে কাজের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। চাকরি হারিয়ে সংসারে আসে অশান্তি। এরপর নিজেই এই আসর থেকে সরে আসেন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘আগে অভিযান চালিয়ে মিনি ক্যাসিনো জুয়া বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু গোপনে আবার এসব চালু করা হয়েছে। এদের হোতাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
র্যাব-৪ এর সিইও মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে এখনও বেশ কিছু মিনি ক্যাসিনোর তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। অচিরেই অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’