রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার বস্তিতে লাগা আগুনে অন্তত ৪০ ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের ১৩টি ইউনিট ও পুলিশ সদস্যদের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টা ৪৫ মিনিটে এই আগুন লাগে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার হুমায়ূন কবির।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাত ১০টা ৩ মিনিটে এই খবর পাই। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে আরও আটটি ইউনিট যোগ করা হয়।’
রাত সোয়া ১১টার দিকে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, কল্যাণপুর ৭ নম্বর বস্তিতে আগুন লেগেছে। এটা নতুন বাজারের কাছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, কল্যাণপুর নতুনবাজার বস্তিতে ১০টি সেকশন আছে। ৭ নম্বর সেকশনে আগুন লাগে। একটি ভাঙাড়ির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে দোকানের অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন।
আগুনে বস্তির অন্তত ৪০ ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ধারণা ভাঙারি দোকানের অরক্ষিত বিদ্যুৎ সংযোগ কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। সেখান থেকে আগুন পাশে কাঠের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মুহূর্তে তা পেছনের বস্তিতে ছড়িয়ে যায়।’
তিনি জানান, কোথায় আগুন লাগার পর আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। এখানেও সেটাই হবে। তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
সাহেল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত গুরুতর হতাহত কাউকে পাইনি। তবে ছোটখাটো হতাহতের ঘটনা আছে। আমরা আগুন লাগার পুরো এলাকায় খোঁজ করছি।’
মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ইস্পাত ভাঙাড়ির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তখন দোকানে ছয়জন ছিলেন।
দোকান মালিকের বন্ধু মাইনুল উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, তার বন্ধু নান্নু মোড়ল, স্ত্রী রুবি, কর্মচারী আমিরুল ও দোকানে ব্যাবসায়ীক কাজে আসা একজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কর্মচারী ও বহিরাগত ব্যক্তি বেশি আহত। তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ভাঙারির দোকানের পাশেই আমার কাঠের দোকান ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে আগুন আমার দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনে পুড়তে থাকে দোকান। দোকানের পিছনেই আমার বাড়ি। সেটাও পুড়ে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। দুই সন্তানও আগুনে আহত হয়েছে।
আগুনে দোকান ও বাড়ি হারিয়ে আহাজারি করছেন সবুজের পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পরিদশর্ক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘কল্যাণপুরে আগুনের ঘটনায় আক্তার হোসেন (১৯) ও আনোয়ার (২১) নামে দুজনকে দগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে ৫০ শতাংশেরও বেশি দগ্ধ হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী বিজয় নিউজবাংলাকে বলেন, ভাঙারির দোকানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশে কাঠের দোকানে। সেখান থেকে আগুন দ্রুতই বস্তিতে লেগে যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়র শনিবার সকালে এখানে আসবেন। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আগামীকাল সকালে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
‘যারা আগুনে পুড়েছেন তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’