বুধবার বেলা ১১টা। রাজধানীর সেগুনবাগিচার জতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফটক। সামনে বসা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। মুখে মাস্ক নেই বেশিরভাগের।
যারা অফিসে ঢুকছিলেন, তাদের অবস্থাও একই। মাস্ক নিয়ে উদাসীন।
অথচ তিন দিন আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর মাস্ক ছাড়া সেবা মিলবে না বলে আদেশ জারি করা হয়। এর আগে পরিকল্পনা হচ্ছিল, সরকারি অফিসে হবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি। তবে পরে বেসরকারি অফিসকেও যুক্ত করা হয়।
মাস্ক মাধ্যতামূলক করে এমন আদেশ এর আগেও হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি।
তবে এটাও ঠিক যে, মাস্কই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে, এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই। যদিও মাস্ক পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত এক মাস ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ কমলেও সরকার মাস্কের ওপর জোর দেয়ার কারণ ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের’ আশঙ্কা। আগামী শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সরকার সতর্ক করেছে। এ কারণেই মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরাপের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে গত দুই দিন বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণ পরিবহনে দেখা গেছে, মাস্ক পরতে আগ্রহ কমই। কারও কারও মাস্ক ঝুলছে গলায়।
করেনাভাইরাস আগমনের শুরুর দিকে এই অফিসে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও এখন এই ব্যবস্থা নেই।
সেগুনবাগিচার অডিট কমপ্লেক্স মূল গেটে বসে থাকা তিন জন আনসারের একজনের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। সেবা নিতে আসা ১০ জনের মধ্যে তিনজনের মাস্ক ছিল না। তবে তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়নি কেউ।
পাশের বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি অডিট অধিদফতের মহপরিচালকের কার্যালয়ের সামনে মিনিট দশেক অপেক্ষা করে দেখা গেছে, ১০ জনের পাঁচ জন অফিসে ঢুকেন মাস্ক ছাড়া।
তবে সেখানে কাউন্টার থেকে ফিরে আসতে হয়েছে মুখে মাস্ক না থাকায়।
সেগুনবাগিচায় রাবডেম জেনারেল হাসপাতালেও একই চিত্র। প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কাউকে তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
যদিও হাসপাতালের হেল্পডেস্কের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া কোনো গ্রাহককেই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে কিছু মানুষ মাস্ক পরে ভেতরে ঘুকে আবার খুলে ফেলছে।’
আলমগীর হোসেন নামের এক রোগী বলেন, ‘সব সময় মাস্ক পরে থাকতে ভালো লাগে না। কিছু সময় আগে মাস্ক খুলে ফেলছি।’
কারওয়ানবাজারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চিত্রও আলাদা কিছু ছিল না।
মাস্ক পরেননি এমন একজন নারীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে দ্রুত চলে যান।
টিসিবি ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্কে দায়িত্বরত তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘এই ভবনে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়া আসে। তাদের বের করে দেয়া হয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে মাস্ক পরতে। পুলিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভূমিকা রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের নামতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও কাজ করতে হবে।’
মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে, সবার সঙ্গে মিটিং করে বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছি। দেশে যত যত সিভিল সার্জন আছেন ও ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার আছে, সবাইকে বলেছি প্রচার করার জন্য।’
‘তারা স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, স্থানীয় সরকারের লোকজন, পৌরসভা, সব পর্যায়ে সবার সঙ্গে বসে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার করবে। হুজুররা যেন ওয়াক্ত ও জুমার নামাজের আগে বা পরে এটা বেশি করে প্রচার করে। একটা ব্যানার করেছি আমরা’-বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।’
আগের অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগ। আদেশ অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জরিমানাও করে।
সংক্রমণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মাস্ক না পরে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
অবশ্য গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঘোষণায় এই আইন সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে বলা জেলা প্রশাসক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি জরিপে দেখা যায়, মাস্ক পরার প্রবণতা ক্রমেই কমছে। গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এই জরিপ করা হয়।
২৭ আগস্ট প্রকাশিত এই জরিপে দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরেন না। যদিও মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার ঝুঁকি কমে, এমন মত এসেছে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ।