জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কর্মীদের ধর্মীয় পোশাক পরার নির্দেশ দিয়ে নোটিসটি প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন পরিচালক আব্দুর রহিম।বলেছেন, মন্ত্রণালয় তাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে তার জবাব তিনি ভেবেচিন্তে দেবেন।
বুধবার ইনস্টিটিউটের মুসলিম কর্মীদের জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক করে আদেশ জারি করেন আব্দুর রহিম। এতে পুরুষ কর্মীদের টাকনুর (গোড়ালির) ওপরে এবং নারীদের হিজাব ও টাকনুর নিচে পোশাক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এই নির্দেশটি স্পষ্টতই ২০১৪ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ের বিরোধী। ওই বছরের ৪ অক্টোবর হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না।
ওই বছরের ২৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, কাউকে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা হলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। কেউ এটি করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- আরও পড়ুন: অভিনয়ে ‘কবুল’ ঠেকাতে আইনি নোটিস
এই নোটিসটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের নির্দেশে রহিমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়।
পর্দা নিয়ে জারি করা নোটিসটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক আব্দুর রহিম
কোন বিধি ও ক্ষমতাবলে এই নোটিস জারি করা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এর মধ্যে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন রহিম।
এক প্রশ্নে পরিচালক রহিম বলেন, ‘যখন আমার স্যার (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) বলেছেন, এরকম একটা চিঠি দিয়েছ, তুমি বাতিল কর। আমি বাতিল করেছি।’
আব্দুর রহিম আদেশ জারির পর মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানের নোটিস দেয়
‘এবং গোটা জাতির কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভবিষ্যতে এ রকম ভুল আর হবে না, প্রতিজ্ঞাও করছি।’
মন্ত্রণালয়ের নোটিসের বিষয়ে এক প্রশ্নে রহিম বলেন, ‘এটার রিপ্লাই আমি দেব, ভেবেচিন্তে। দুই একজন কলিগের সঙ্গে আলোচনা করে এটার জবাব দেব।’
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন ক্ষমতা এবং বিধির বলে এই নোটিস দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এক প্রশ্নে রহিম বলেন, ‘আমি এখনও কোনো মন্তব্য করব না, আগে চিঠিটা ভালোভাবে পড়ি, চিঠির মর্মার্থ বুঝে আমার দুই একজন সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আমি চিঠির জবাব দেব।’
নোটিসটি কারও সঙ্গে পরামর্শ করে দেয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে রহিম বলেন, ‘না না, না একদম না, একদম না।’
তবে ভুল স্বীকার করলেও নিজের নোটিসের পক্ষে যুক্তিও দেন আইপিএইচ পরিচালক। বলেন, ‘এটাকে তো আমি ফেসবুকে দেই নাই। এটাকে আমি দিছি আমার ইনস্টিটিউটে, আমার স্টাফরা যাতে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে, ইজিলি পালন করতে পারে এই রকম।’
কোন প্রেক্ষাপটে এই ধরনের নোটিস দেয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত কয়দিন ধরে আমি ধর্ষণের প্রচারগুলো দেখে নিজে নিজে খুবই বিস্মিত হলাম।’
‘আমি দেখলাম ধর্ষণ, যেখানে বইতে লিখেছে, মেয়ার টাচ উইদাউট কনসেন্ট ইজ রেপ।
‘রেপে কী হয়? কবিরা গুনাহ হয়। আমি চিন্তা করলাম, আমাদের জন্য কত ইজি যে আমরা কবিরা গুনাহ এভয়েড করতে পারি।
অফিসে পর্দা বাধ্যতামূলক করে এই নোটিসটি জারি করেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক
‘সেটাই টাকনু গিটের গুরুত্ব, টাকনু গিটের ওপরে পুরুষ কাপড় পরবে, আর মহিলারা টাকনুর নিচে কাপড় পরবে।’
ধর্ম পালন তো ব্যক্তিগত ব্যাপার- এমন মন্তব্যের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এটা চাপিয়ে দেয়া নয়। এটা তার জ্ঞান বোধ দিয়ে শুরু। একটু নাড়া দেয়া।
‘ওই মুসলিম জানে টাকনু গিটের নিচে কাপড় পরলে কী হয়, টাকনু গিটের ওপরে কাপড় পরলে কী হয়।’