জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক আব্দুর রহিম ধর্মীয় পোশাক পরতে যে আদেশ জারি করেছেন, সেটি এক দশক আগে হাইকোর্টের একটি রায়ের বিরোধী।
বিষয়টি জেনে হতবাক হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোন বিধিবলে এবং কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ‘বেআইনি’ জারি করা হয়েছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিন দিনের মধ্যে চাওয়া হয়েছে জবাব।
স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাকে (আব্দুর রহিম) এরই মধ্যে শোকজ করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে আপত্তিকর বিজ্ঞপ্তির ব্যাখ্যা না পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘কেন তিনি এটি করেছেন তদন্ত করা হবে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে ওএসডি করা হতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, তিনি গণমাধ্যমের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় পারেননি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পর্দার বিষয়ে জারি করা আদেশটি মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। আগামী রোববার শোকজ নোটিসের বিষয়ে অগ্রগতি জানানো হবে।
বুধবার অক্টোবর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আদেশটি জারি হয়। এতে ‘পর্দা’ মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, মুসলিম পুরুষ কর্মচারীরের টাকনুর উপরে এবং নারীদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে কাপড় পরতে হবে।
অফিসে পর্দা করার নির্দেশ দিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালকের অফিস আদেশ
আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে বলেছেন, তিনি তার ‘ধর্মীয় অনুভূতি থেকে’ এই আদেশ জারি করেছেন। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি।
তিনি এমনও বলেছেন, এই আদেশ আরও আগেই জারি করা উচিত ছিল।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরি আইনে, কর্মচারীদের পোশাকের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে এক দশক আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টের দুটি আদেশ অনুযায়ী এই নির্দেশনা স্পষ্টত বেআইনি।
২০১০ সালের ৪ অক্টোবর হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালককে করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শোকজ
ওই রায়ে বলা হয়, ‘শালীনতা সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরার অধিকার রয়েছে।’
ওই বছরের ২৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, কাউকে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা হলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। কেউ এটি করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানবাধিকার কর্মী ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনি (আব্দুর রহিম) এটা করতে পারেন না। আধুনিক কোনো রাষ্ট্রে কোনো পোশাক পরতে কেউ না করতে পারবে না আবার বাধ্যও করতে পারবে না।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় মানে আইন। যেহেতু তিনি আদেশ অমান্য করেছেন, হাইকোর্ট ইচ্ছা করলে তার তোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি তার জায়গা থেকে এ ধরনের নোটিস করতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস দেয়া হবে।’
কয়েকটি হাসপাতালে আধুনিকায়নের কাজে মহাপরিচালক বর্তমানে ঢাকার বাইরে আছেন।
বেলা সাড়ে চারটার দিকে মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গিয়ে পরিচালক রহিমকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
অফিসের অন্য কর্মকর্তারা জানান, পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেছেন। তাকে ডাকা হয়েছে। এরপর অফিস বন্ধ হওয়ার আগে তিনি আর কার্যালয়ে ফেরেননি। এরপর ফোনও বন্ধ।
অফিস থেকে বের হতে হতে নিউজবাংলাকে আব্দুর রহিম বলেন, ‘এটা আমি দিতে পারি কি না, এই প্রশ্ন করার আগে আমি আমার ধর্মীয় দায়িত্বের কথা ভেবেছি।’
‘আমাদের দেশ মুসলিম কান্ট্রি, আমাদের দেশে, আমার অফিসে যদি এভাবে সজ্জিত হয় আমার কাছে ভালো লাগবে’-বলেন পরিচালক।
যদি কেউ না মানে তাহলে আপনি কী ব্যবস্থা নেবেন?- এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, ‘এটা ধর্মীয় ব্যাপার। কাউকে জোর করা হবে না। কেউ মানলে মানতে পারে, না মানলে নাই।’
সমালোচনার মুখে পর্দা নিয়ে আদেশ সরিয়ে নেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক
তাহলে আদেশ জারির কী আছে, এমনিতে বললেই তো হতো- এমন মন্তব্যের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘আমি আমার ঊর্ধ্বতন জায়গা থেকে এই নির্দেশনা দিয়েছি।’
পরিচালকের কক্ষের সামনে নোটিস বোর্ডে আদেশটি পাওয়া যায়নি। কর্মীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সেটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আব্দুর রহিম গত ২৬ মার্চ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ছিলেন।