রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। ওই সময় হাসপাতাল মালিক, ভুয়া চিকিৎসকসহ ৬ জন আটক করা হয়।
নানা অনিয়মের দায়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে মক্কা-মদিনা ও নূরজাহান হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টা থেকে এ অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু।
এ বিষয়ে তিনি নিউজবাংলাকে জানান, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার মক্কা-মদিনা হাসপাতাল, নূরজাহান জেনারেল হাসপাতাল ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অনিয়ম ও ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।
মক্কা-মদিনা হাসপাতালের মালিকসহ তিন জনকে আটক করা হয়। নূরজাহান জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ও একজন ওটি বয়কে আটক করা হয়। অন্যদিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালের মালিককে আটক করা হয়।
পলাশ জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় নুরজাহান অর্থোপেডিক্স হাসপাতালের একটি চক্র সরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে আনতেন। তারা উন্নত চিকিৎসা দেয়ার কথা বললেও হাসপাতালের মেঝেতে রক্তমাখা কাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তারা ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে অস্ত্রোপচার করাতো।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালটির পরিচালক বাবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ওয়ার্ড বয়কে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
নুরজাহান অর্থোপেডিক্স হাসপাতালস ও মক্কা-মদিনা হাসপাতালকে সিলগালা করে দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেনকে।
আবুলের বয়স ৫০ এর কোটায়। পাস করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত।
একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও রোগীদের ভাঙা হাত-পায়ের এক্সরে দেখে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই দেন।
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুরুতেই মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পরিচালক নূর নবীর কোনো ধরনের চিকিৎসা দেয়ার সনদ বা অনুমোদন নেই। তিনি তার কক্ষে বসে রোগী দেখে তাদের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। হাত ভাঙাসহ বিভিন্ন গুরুতর আহত যে রোগীরা আসতেন, তাদের অস্ত্রোপচার করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, যা তিনি কোনোভাবেই পারেন না।
এ অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটির পরিচালক নূর নবীকে এক বছরের কারাদণ্ডসহ সহযোগী আনোয়ার হোসেন কালু ও আবদুর রশিদকে ৬ মাস করে সাজা দেয়। সেই সঙ্গে মক্কা-মদিনা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
পলাশ বসু বলেন, ‘আমরা চাই মানুষের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে এমন এইচএসসি পাশ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে প্রতারিত না হন। এমন অপচিকিৎসা মানুষের অর্থ ও জীবনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। সিলগালা করা হয়েছে জনস্বার্থে।
‘সিলগালা করে টোটাল রিপোর্টটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা আছেন, তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করা হবে, যাতে করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।’
এসব হাসপাতালগুলো থেকে সেবা নেয়া রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত এসব দালালদের কাছে রোগীরা প্রতিনিয়ত সেবার নামে প্রতারণা করে আসত। এসব রোগীদের অধিকাংশই ছিল নিম্নবিত্ত।
এমনই একজন রোগী আরিফ বলেন, নুরজাহান হাসপাতালে তিনি এক দালালের মধ্যেমে চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি হন। পায়ে সমস্যা থাকায় অস্ত্রোপচার করতে বলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক। পরে তার পায়ে সংক্রমণ হয়। চিকিৎসকদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।