বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আজমেরী ওসমান কোথায়

  • নিউজবাংলা প্রতিবেদন    
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:২৭

শামীম ওসমানের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরীকে একাধিক রাতে নারায়ণগঞ্জে দেখার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ত্বকী হত্যা মামলায় নাম আসা আজমেরী ওসমানকে এখনও আটক করা যায়নি। যদিও পাঁচ বছর আগে র‌্যাব এই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার তথ্য নিশ্চিত করেছিল।

শামীম ওসমানের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরীকে একাধিক রাতে নারায়ণগঞ্জে দেখার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

নারায়ণগঞ্জে ত্বকী মঞ্চের সদস্য ধীমান সাহা জুয়েল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজমেরী গভীর রাতে শহরে বিকট শব্দে গাড়ি চালিয়ে মহড়া দেন, এটা পুলিশ দেখে। তিনি খানপুর, লিংক রোডে অবস্থান করেন। কিন্তু তাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রশাসন চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু পুলিশের ইচ্ছা নেই তাকে গ্রেফতারের।’

২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেয়ার পর আজমেরীকে প্রায় এক বছর দেখা যায়নি। তবে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর হারুন বদলি হওয়ার পর তিনি আবার ফিরে আসেন।

দিনের বেলায় প্রকাশ্যে না এলেও আজমেরীর নামে হুমকিধামকি-চাঁদাবাজির অভিযোগ চলছেই। আজমেরীকে তার অনুসারীরা ‘হাজী সাহেব’ বলে ডাকে। আর ‘হাজী সাহেব’ পাঠিয়েছে বলেই সম্বোধন হয়।

সম্প্রতি পুলিশের কাছে করা সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে, আজমেরী নিজে উপস্থিত হয়ে তাকে হুমকি দিয়েছেন।

২০১৩ সালের ৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরী ওসমানের কথিত সেই টর্চার সেলে অভিযান চালায় র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা প্যান্ট, ধারালো অস্ত্রসহ ‘নির্যাতনে ব্যবহার করা নানা উপকরণ’।

অভিযানের সময় আজমেরী ওসমান তার ‘টর্চার সেলে’ ছিলেন না। সে সময় তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করে র‌্যাব।

পুরান ঢাকায় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের ‘টর্চার সেল’ খুঁজে পাওয়ার পর আজমেরীর সেই টর্চার সেলের প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে।

২০১৫ সালে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ত্বকী হত্যায় আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ত্বকী হত্যার আগেও খুনসহ একাধিক ঘটনায় আজমেরীর নাম এসেছে। তার নামে বিভিন্ন সময় থানায় অভিযোগ ও মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ তার সামনেও যেতে পারেনি।’

এক মাস আগেও আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে তৈরি পোশাক কারখানা মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রিজের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স) অরূপ কুমার সাহা ফতুল্লা মডেল থানায় আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন।

এতে বলা হয়, স্থানীয় বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম খানের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। তিনি চাকরিতে বহাল থাকতে তদবির শুরু করেন।

স্কুলটির স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রির মালিক মাসুদুজ্জামান।

অভিযোগ করা হয়, ২৯ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ফতুল্লার তল্লা রোড খাঁনপুর এলাকায় মাসুদুজ্জামানের পোশাক কারখানার সামনে সহযোগীদেরকে নিয়ে আসেন আজমেরী। তিনি একটি সাদা পাজেরো গাড়িতে বসেছিলেন।

সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, আজমেরী তার তিন সহযোগী তরিকুল ইসলাম লিমন, আনোয়ারুল করিম টিটু ও সনেটকে নির্দেশ দেন কারখানার মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেনকে ধরে আনতে।

তারা নিরাপত্তা প্রহরীদের মারধর করে মনিরকে খোঁজে। না পেয়ে খুনের হুমকি দেন আজমেরী।

শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে কয়েক বছর একটি ফ্ল্যাট দখল করে রাখার অভিযোগও আছে আজমেরীর বিরুদ্ধে। 

২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাচ্চু নামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আজমেরীর বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলা হয়। তখন পুলিশ আজমেরীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাকে না পাওয়ার কথা জানায়।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর চাড়ারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

ত্বকী হত্যায় আজমেরী জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার চায় না তাই ত্বকীর বিচার হয় না।’

‘ত্বকী হত্যায় আজমেরী জড়িত, এটা র‌্যাব জানে, নিজেরাই বলেছে। তারপরও তারা কেন চার্জশিট দেয় না, তা আমরা জানি না’-আক্ষেপের সঙ্গে বলেন রাব্বী।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘শহরে তাকে (আজমেরী) টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। তার লোকেরা ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই শহরের বিভিন্ন অপরাধ হচ্ছে তার নামে।’

‘তার বাহিনীরা গিয়ে বলে হাজী সাহেব (আজমেরী ওসমান) পাঠিয়েছে। তার বাহিনী শহরে খুন, গুম, হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত কিন্তু পুলিশকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।’

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, ‘গত নয় মাসে আজমেরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি তবে জিডি হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।’

এত অভিযোগ থাকার পরেও কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আগের একটি মামলায় আজমেরী জামিনে আছেন কিনা তা জানি না। তবে যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ত্বকী হত্যার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব-১১ এর সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। পর্যালোচনার পর তা আদালতে জমা দেয়া হবে, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

আজমেরীর নামে চাঁদাবাজি করে গ্রেফতার

২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইল ফোনে সোনারগাঁও পৌরসভার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলের কাছে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় আজমেরীর নামে।

১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেফতার হন চাঁদা দাবি করা সেই ব্যক্তি।

১৬ সেপ্টেম্বর আজমেরী ওসমানের নাম বলে চাঁদাবাজির অভিযোগে সোনারগাঁও পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন গ্রেফতার হন। 

৭ জুলাই আজমেরী ওসমানের কণ্ঠ নকল করে একজনের কাছে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ওই এক যুবককে গ্রেফতার করে।

২৯ মে চাঁদাবাজির মামলায় শহরের কলেজ রোডের একটি বাসা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আজমেরী ওসমানের অনুসারী হাবিবুর রহমান হাবিব।

এ বিভাগের আরো খবর