অজানা অভিমানে নিজের পেটের সন্তান সৌম্য আত্মঘাতী হয়েছে দুই বছর আগে। এতদিনে অচেনা এক শিশুতে নিজের ছেলেকে খুঁজে পেয়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা গ্রামের শিখা রানি চৌধুরী।
কালীগঞ্জে গাছের ডালে ব্যাগে ঝুলতে থাকা শিশুকে নিজের সন্তান হিসেবে বুকে টেনে নিয়েছেন শিখা। আদালতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে নানা শর্তে নিয়েছেন দত্তক।
উদ্ধারের পর এলাকাবাসী আদর করে ছেলেটির নাম রেখেছিল মহারাজ। ঘরে তোলার পর নতুন বাবা মা নাম রাখেন তিতাস।
ছেলেটিকে ঘিরেই এখন দিন কাটে পরিবারটির। তার হাসি-কান্না, ঘুম-জাগ্রত থাকার সঙ্গে পরিবারের বড়দের আনন্দ, উচ্ছ্বাস মিলে মিশে একাকার।
শিখা রানি চৌধুরী বলেন ‘ও এখন দিনে ঘুমায়। রাতে খেলা করে। পালাক্রমে জেগে থেকে আমি আর আমার স্বামী তাকে সঙ্গ দেই। আমি চাই, মহারাজ মানুষের মতো মানুষ হোক।’
তিতাস নাম রাখলেও সন্তানকে আগের নাম ‘মহারাজ’ই ডাকেন শিখা। বলেন, ‘সে এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে দেয়। সরিয়ে দিলেও আবার একই অবস্থায় পা চলে যায়। এজন্য মনে হয় তার নাম মহারাজ যথার্থই ছিল।’
আড়াই বছর আগে সন্তান হারানোর দুঃখ এখন আর তাড়া করে ফেরে না শিখাকে। বলেন, ‘আমি সব কষ্ট ভুলে গেছি। দিন-রাত কেটে যায় মহারাজকে নিয়ে। এখন সেই আমার সব; বর্তমান-ভবিষ্যত।’
বাবা বরুণ পাল বলেন, ‘ছেলে সৌম্য ছিল আমার বন্ধুর মতো। এক সঙ্গে বের হতাম। আমি আমার কলেজে, সে তার স্কুলে যেত। বাইকে বসে কত গল্প করতাম। সেসব আজ স্মৃতি। মহারাজ এসে আমার বুকের জ্বালা নিভেছে। তাকে বড় করতে হবে, মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।’
প্রতিবেশী সুমনা পাল বলেন, ‘কাকাদের (বরুণ পাল) বাড়িটা আড়াই বছর নিভে ছিল। আমি কখনও তাদের হাসতে দেখিনি। মহারাজ এসে বাড়িটাকে আবার আলোকিত করেছে। কাকা ও কাকিমা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে।’
৪ অক্টোবর সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের গোলখালি শ্মশানের কাছে একটি গাছে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে বাজারের ব্যাগে ঝুলানো অবস্থায় পায় স্থানীয়রা। পরে তাকে ভর্তি করা হয় কালীগঞ্জ হাসপাতালে। সুদর্শন শিশুটির নাম রাখা হয় ‘মহারাজ’।
মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটিকে দত্তক পেতে ২৯টি আবেদন জমা পড়ে। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড আবেদনগুলো সাতক্ষীরা শিশু আদালতে পাঠায়।
আদালত ১২ অক্টোবর শিশুটিকে তালা উপজেলার কুমিরা গ্রামের শিখা চৌধুরী ও বরুণ পাল শিক্ষক দম্পতির হাতে তুলে দেয়। এই দম্পতি শিশুটির নাম রাখে তিতাস।