বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচারকের ‘ত্রুটি’: পেছাল ওয়াশিকুর হত্যার রায়

  • হীরক পাশা, ঢাকা   
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২০ ১৪:৩৯

আসামি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ হয়েছিল উল্লেখ করে রায় ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে। বিচারক সে আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর আবার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করে।

সাড়ে চার বছর বিচার চলার পর রায় ঘোষণার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু অভিযোগ গঠনে আগের বিচারকের ‘মারাত্মক ত্রুটির’ কারণে পিছিয়ে গেল রায় ঘোষণা।

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার মামলায় শুনানি হবে নতুন করে। রায় ঘোষণার আগ মুহূর্তে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

ফলে সাড়ে পাঁচ বছর আগের এই হত্যার বিচার ঝুলে গেল আরও।

গত ৪ অক্টোবর আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল ইসলাম।

কিন্তু মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনকারী বিচারক মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমানের ত্রুটির বিষয়টি সামনে এনে রায় স্থগিত করার আবেদন করে।

কয়েকটি ‘আইনি ত্রুটি’ ও জটিলতার কারণ দেখিয়ে আবেদন করা হয় নতুন করে অভিযোগ গঠনের।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদারের এই আবেদন গ্রহণ করে বিচারক রবিউল ইসলাম ৪ নভেম্বর নতুন করে অভিযোগ গঠন শুনানির তারিখ দেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ২২৭ ধারায় এই আবেদন করা হয়। এই ধারায় বলা আছে, ‘রায় প্রকাশ করার আগে যে কোনো পর্যায়ে আদালত অভিযোগ পরিবর্তন করতে পারে এবং প্রত্যেকটি পরিবতর্ন বা সংযোজন আসামিকে পড়ে শোনাতে হবে।’

আবেদনে বলা হয়, মামলার অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম হত্যার সময় অন্য একটি নাশকতা মামলায় কারাগারে ছিলেন। সুতরাং তিনি সরাসরি হত্যায় যুক্ত ছিলেন না। তিনি এ হত্যার ষড়যন্ত্রকারী ও পরামশর্ক ছিলেন।

 

কিন্তু অভিযোগ গঠনের সময় সাইফুলের সে ভূমিকার কথা উল্লেখ করেননি বিচারক এস এম জিয়াউর রহমান। তাকে এ ধারার ১২০ (বি) উপধারায় অভিযোগে যুক্ত করেননি।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বলা হয়, ‘এটি মামলার বিচারে মারাত্মক ত্রুটি। আর যে কারণে সাইফুলকে সাজা দেয়া হবে ত্রুটিযুক্ত।’

এই মামলায় ৪০ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নামে দুই মাদরাসাছাত্রকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

ফেসবুক ও ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে লেখালেখি করায় বাবুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল স্বীকার করেন।

এই দুই জনসহ চার জনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে ওই রাতে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্য জিকরুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, হাসিব আব্দুল্লাহ (পলাতক) ও আবু তাহের জুনায়েদের (পলাতক) বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

২০১৬ সালের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমান।

যে আসামির ঘটনায় এই মামলায় নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই সাইফুলকে হত্যার কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তবে গত সাড়ে চার বছরে অভিযোগ গঠনে এই ত্রুটির বিষয় নিয়ে আদালতে কিছু বলেনি রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৪ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাহউদ্দিন হাওলাদার আশা করেন, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

তিনি সেদিন বলেন, ‘আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য- প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, তাতে আশা করছি মৃত্যুদণ্ড হবে।’

এই মামলায় দুই পলাতক আসামি জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরার পক্ষে রাষ্ট্রের খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। তারাও কিছু বলেননি।

২৭ বছর বয়সী ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি বেশি লেখালেখি করতেন ফেইসবুকে।

ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করায় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিকুরের মতোই খুন হন রাজীব হায়দার। গত ৩১ ডিসেম্বর ওই মামলায় দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে আদালত।

রাজীব হত্যার পর আরও অন্তত ছয়জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, প্রকাশক একই কায়দায় খুন হন। এর মধ্যে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার বিচার চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর