সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলাম জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাসায় অবৈধ ওয়াকিটকি ও মদ রাখায় তাদের এ দণ্ড দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ড পাওয়া ইরফান ও জাহিদকে পাঠানো হয়েছে কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ইরফানকে সোমবার আটকের পরই পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাট লেনে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান শুরু করে র্যাব।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া অভিযান চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। এরপর আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অভিযান শুরু করে এলিট বাহিনীটি। র্যাবের গোয়েন্দা দল, র্যাব-৩ ও র্যাব-১০ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শুরুর পর হাজী সেলিমের নয় তলা ভবন ‘চাঁন সরদার দাদাবাড়ি’র আশপাশের কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল সীমিত করে দেয় র্যাব। তবে বাধা উপেক্ষা করে অসংখ্য উৎসুক মানুষ জড়ো হয় ভবনের সামনে।
নয় তলা ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকেন ইরফান। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, ইরফানের শয়ন কক্ষ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৮টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং কয়েক বোতল বিদেশি মদ পাওয়া গেছে।
এছাড়া, জাহিদের কাগজপত্রবিহীন একটি পিস্তল ও ৪০০ পিস ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানে একটি বিশেষ ব্রিফকেস পাওয়া গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, যে ব্রিফকেস, ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে সেগুলো সাধারণত ব্যবহার করে বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী।
ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, বাসায় অবৈধ ওয়াকিটকি ও মদ রাখায় ইরফান ও জাহিদকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার সন্ধ্যার পর তাদের পাঠানো হয় কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এছাড়া, বৈধ কাগজপত্রবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ায় ইরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে নিয়মিত মামলা হবে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘ইরফানের বাসাটি ওয়াকিটকির বেস সেন্টার। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কাজে এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হতো।’
অভিযানে সময় ইরফান সেলিমের বাসার পাশে একটি টর্চার সেলেরও সন্ধান পায় র্যাব। পরে সেখানেও চলে অভিযান।
মদিনা আশিক টাওয়ার, ২১-৩০ চক সার্কুলার রোড ভবনের ১৬ তলা ছাদে রয়েছে এই টর্চার সেল। সেখান থেকে হ্যান্ডকাফ, ছুরি, ওয়াকিটকি, ট্রানজেস্টার, হকিস্টিক, রশি, গামছা ও দূরবীন উদ্ধার করা হয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযানের এক পর্যায়ে এই কক্ষের সন্ধান পেয়েছি। কক্ষটিতে যে ধরনের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তাতে আমাদের ধারণা এখানে লোকজনকে এনে নির্যাতন করা হতো।’
এর আগে মারধরের ঘটনায় সোমবার সকালে ইরফানসহ চার জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ওয়াসিফ।
অভিযান সম্পর্কে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সে জনপ্রতিনিধি হোক বা যেই হোক, আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সুশাসন বাস্তবায়নে এটাই সরকারের অবস্থান।’
ধানমন্ডি থানায় করা মামলার আসামিরা হলেন হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, তার সহযোগী এবি সিদ্দিক দিপু, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও মিজানুর রহমান। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশফাক রাজীব হাসান জানান, এ ঘটনায় রাতেই (রোববার) আটক গাড়িটির চালক মিজানুর রহমানকে সোমবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে মিজানের ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও আদালত এক দিনের রিমান্ডে দিয়েছে।
ধানমন্ডি থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুন্নাহার জানান, হাজী সেলিমের গাড়িটি জব্দ করে ধানমন্ডি থানায় রাখা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির কলাবাগান সিগন্যাল সংলগ্ন রাস্তায় হাজী সেলিমের গাড়ির আরোহীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।