রাজশাহী থেকে সাভারে এসে সন্তান মোস্তাফিজুর রহমান হত্যার ঘটনায় মামলা করলেন বাবা মজিবুর রহমান। পুলিশকে বলেছেন, খুনিদেরকে যেন দ্রুত ধরা হয়, যেন উপযুক্ত বিচার হয়। তার মতো এভাবে সন্তান হারানোর কষ্ট যেন অন্য বাবাদের না হয়।
পুলিশও বলেছে, তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে খুনিদেরকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
হত্যার দুই দিন পর সোমবার ভোরে রাজশাহী থেকে সাভারে এসে মামলা করেন মজিবুর। সন্দেহভাজনদের পরিচয় জানা নেই। মামলা হয়েছে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে।
গত শনিবার ভোরে সাভারের সিআরপি রোডে ছিনতাইকারির ছুরিতে নিহত হন মোস্তাফিজুর। তিনি সাভারের গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। থাকতেন ডগরতলী এলাকায়।
ছিনতাইকারির ছুরিকাঘাতে মোস্তাফিজুর রহমানকে হত্যার পুরো ঘটনা ধরা পড়েছে পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায়
নিহত যুবকের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর। স্ত্রী ও সন্তানদের আনতে গিয়েছিলেন বাড়ি। তবে এক বছরের ছেলের জ্বর থাকায় তাদের ছাড়াই ফিরে আসেন। কথা দিয়েছিলেন নিরাপদে ফিরে ফোন দেবেন।
শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পর সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে গিয়ে বুকে ছুরিকাঘাত করে মোস্তাফিজুরকে হত্যা করে ছিনতাইকারিরা। পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায়।
মোস্তাফিজুরের বাবা মজিবুর রহমান পেশায় কৃষক। সহজ সরল মানুষ। জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। আর্থিক চাপে থাকলেও সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পর সংসার চালানোর টাকার বড় অংশের যোগান দিতেন ছেলে। এখন কী করে তিনি চলবেন, এক বছর বয়সী নাতিকে কীভাবে বড় করবেন, দুশ্চিন্তায় তিনি।
- আরও পড়ুন: মোস্তাফিজের এক বছরের সন্তানের কী হবে
বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বজনরা। ওই এলাকায় বাড়ি এমন একজন পুলিশ সুপারও সহায়তা করছেন। ঢাকায় আসার জন্য তারা গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছেন।
সন্তানের মতোই গভীর রাতে সাভার পৌঁছান বাবা। গাড়ি থেকে নামার পর পুলিশ তাকে নিয়ে যায় থানায়।
মামলার এজাহার পুলিশই লিখে রেখেছিল। মজিবুর কেবল সই করেন।
- আরও পড়ুন: মোস্তাফিজ হত্যা: বিপজ্জনক সিআরপি সড়ক
নিউজবাংলাকে মোস্তাফিজুরের বাবা বলেন, ‘আমি চাই আর কোনো বাবা যেন আমার মতো সন্তানহারা না হয়। পুলিশকে বলেছি আপনারা ব্যবস্থা নেন।
‘পুলিশের কাছে আমার ছেলেকে হত্যার বিচার চেয়েছি। দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছি। পুলিশ খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়েছে।’
সাভারের সিআরপি রোডে নানা সময় ছিনতাইয়ের তথ্য আছে। তবে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, ‘মোস্তাফিজুরের বাবা অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। তিনি সেভাবে তেমন কিছুই বলতে পারেন না। তারপরও ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি আমাদের কাছে জানিয়েছেন। আমরা তাকে দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছি।’
পুলিশের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা কয়েকজনকে শনাক্ত করেছেন। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’