প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার।
আজ সোমবার বিজয়া দশমীতে ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং দেবীকে হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য এ দিন ভক্তরা সাধারণত সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। তবে এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সিঁদুর খেলা হচ্ছে না।
শুধু রীতি অনুযায়ী সিঁদুর বরণ হচ্ছে। তা ছাড়া শোভাযাত্রাও হচ্ছে না। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে প্রতিমা বিসর্জন।
বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠীতে দেবীর আগমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজা। তিন দিন বৃষ্টি-বাদল মণ্ডপে যেতে বাদ সাধলেও নবমী ও বিজয়া দশমীর দিন আবহাওয়া অনুকূল। তাই সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর মণ্ডপগুলোতেও ভিড় দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবমন্দিরে পূজা দেখতে আসা রুমা রাণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে যে মা এসেছে আমাদের মাঝে। আমরা মায়ের সেবা করতে পারছি। তবে খারাপ লাগছে, আজ মা চলে যাবেন। আজ মাকে বিদায় দেব। মা প্রতি বছর আসেন আমাদের মাঝে এবং জীবন মঙ্গলময় করে দিয়ে যান।’
পূজা দেখতে আসা অভিরাজ সাহা বলেন, এবার একটু খারাপ লাগছে। কারণ করোনার জন্য অনেক আনুষ্ঠানিকতা বাদ হয়ে গেছে। সন্ধ্যার আয়োজনগুলো এবার আর হয়নি।
দশমীর দিন হওয়ায় সকাল পৌনে ৭টায় দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দশমী হয় বেলা ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত। দর্পণ বিসর্জনের পর সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন শুরু হওয়ার কথা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হয়।
করোনা সতর্কতার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মায়ের ভোগের প্রসাদ ছাড়া খিচুড়ি বা এ জাতীয় প্রসাদ বিতরণ করা হয়নি। অনেকেই অঞ্জলি দিয়েছেন বাসায় বসে। তবে নবমী পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা ছিল।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। এ ছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, করোনা সতর্কতা ও বৃষ্টির কারণে গত তিন দিন অনেকেই মণ্ডপ প্রদর্শনে আসেননি। তবে আজ তারা সবাই আসছেন। এ কারণে মণ্ডপগুলোতে ভিড় কিছু বাড়বে।
সেটি বিবেচনায় রেখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে রাজধানীর মন্দিরগুলোতে। এবার থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি প্রতিযোগিতা।
সারা দেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে মণ্ডপের সংখ্যা ২৩২টি।
গত বছর সারা দেশে মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। আর এবার মণ্ডপ কমেছে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৮৫টি।