মাধ্যমিক শ্রেণির জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে।
রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী ১ নভেম্বর থেকেই শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। জমাও দিতে হবে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে।
শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়বস্তু জানিয়ে দেবে।
করোনা মহামারির কারণে এবার স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
২১ অক্টোবর ওই ঘোষণায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৩০ দিনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে একটি অ্যাসাইনমেন্ট নেয়া হবে। তবে এর মাধ্যমে পাস-ফেল নির্ধারণ করা হবে না। এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা কোথায়, সে বিষয়ে ধারণা নেয়া।
তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে কী পড়ানো হবে, ঘাটতি দূর করতে কী কৌশল নেয়া হবে, তা এই অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করবে।
এদিকে যে শিক্ষকরা এই মূল্যায়ন করবেন, তাদের মধ্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। নির্দেশনা জারি হলেও এখনো সিলেবাসের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাননি শিক্ষকরা।
করোনাকালে অনলাইনে ও সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হলেও নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা সে সুবিধার বাইরে ছিল। ফলে তারা অনলাইন অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় পড়বে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা।
ফরিদপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন বলেছেন, কিন্তু আমরা লিখিত কোনো কিছুই পাইনি। তবে যেহেতু মন্ত্রী এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, সেই অনুযায়ী অ্যাসাইমেন্ট নেয়া হবে।’
তিনি জানান, তাদের স্কুলে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রিক কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না। এতদিন এমন কোনো নির্দেশনাও পাননি। এখন যেভাবে মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দেয়া হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
ঝিনাইদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বরিউল ইসলাম বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট নেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এ বিষয়েও কিছু জানি না।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মূল্যায়ন পদ্ধতির গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করতে চাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আলাদা একটি কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমাবে। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগও বাড়াবে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে এই অ্যাসাইনমেন্টে সবাই অংশ নিতে পারবে কি না, এটা দেখার বিষয়।’
এই শিক্ষক নেতা আরও বলেন, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এটি করা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়। জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু করা গেলে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে লাভ হতে পারে। যদি আরও দেরি হয় তাহলে এটা করে লাভ হবে না।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সাত মাসের বেশি সময় ক্লাসের বাইরে। সংসদ টিভিতে ক্লাস হলেও গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যোগ দেয়নি। অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে কি না, এখনই তা ভাবা উচিত।’