বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আইন পড়াটাই ভুল হয়েছে’

  •    
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:২৮

নিয়মিত পরীক্ষা নেয় না বার কাউন্সিল। নিবন্ধনের বাইরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। নিয়মিত পরীক্ষা ও করোনাকালে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে চলছে অবস্থান কর্মসূচি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে ২০১৪ সালে এলএলবি পাস করেছেন তাহমিনা সুলতানা। ২০১৭ সালে বার কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করলেও আটকে যান লিখিত পরীক্ষায়।

এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করলে লিখিত পরীক্ষা দেয়া যায় আরও এক দফা। কিন্তু সেই পরীক্ষা আর হয়নি।

২০১৭ সালের পরীক্ষাটাও হয়েছিল দুই বছর পর। এই পরীক্ষাগুলো আইনজীবী হওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম। নিবন্ধিত হলেই কেবল আদালতে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার সুযোগ আছে।

আইন অনুযায়ী বছরে দুটি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও গত সাত বছরে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র দুটি। আর চলতি বছর এমসিকিউয়ের পর লিখিত পরীক্ষা আটকে আছে করোনার কারণে।

নিয়মিত পরীক্ষা না হওয়ায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে আছেন।

সাধারণ ছুটির সময় বার কাউন্সিলের সামনেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা

 

আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে সবাই যে আইনজীবী হন এমন না। সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ আছে। মানবাধিকার সংস্থা, বিদেশি দূতাবাস, বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওতে আছে আইন কর্মকর্তা বা প্যানেল আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ।

কিন্তু এই চাকরিও আটকে যাচ্ছে নিবন্ধন না থাকায়। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান কেবল বার কাউন্সিলে নিবন্ধিতদেরই চাকরি দিয়ে থাকে।

আদালতে এমনও দেখা গেছে, শিক্ষানবিশ হিসেবে কেউ কাজ করছেন সাত থেকে আট বছর ধরে। আর শিক্ষানবিশ থাকলে আয়ের সুযোগ তার সিনিয়রের মন-মর্জির ওপর নির্ভর করে।

শিক্ষার্থীরা এবার আন্দোলনে নেমেছেন। করোনার মধ্যেও একদল শিক্ষানবিশ প্রায় চার মাস ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কখনও বার কাউন্সিল, কখনও সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে। এখন আছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।

তাদের দাবি দুটি। ১. নিয়মিত পরীক্ষা নেয়া, ২. করোনাকালে লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে এমসিকিউ উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধন দেয়া।

তবে ১১৪ দিন ধরে চলা কর্মসূচি বার কাউন্সিল বা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। কেউ যাননি আন্দোলনকারীদের কাছে।

বছরে দুটি নিবন্ধন পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরে হয়েছে কেবল একটি। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের জীবিকা অর্জন কঠিন হয়ে পড়েছে 

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ ল’কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছেন মারুফুল ইসলাম। ভেবেছিলেন চাকরির মন্দা বাজারে প্রতিযোগিতায় না নেমে স্বাধীন আইন পেশায় দক্ষতার প্রমাণ রেখে আয় করবেন। কিন্তু সাত বছরেও আর আইনজীবী হয়ে উঠা হলো না মারুফের।

শিক্ষানবিশ আইনজীবী তাহমিনা সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইন পড়া শেষ করেছি ২০১৪ সালে। এখন চলে ২০২০ সাল। এর মধ্যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ১২টি। আমার সহপাঠীরা এখন অনেকেই চাকরিতে প্রমোশন পেয়েছে একাধিক।

‘আমি আইনজীবীই হতে পারলাম না। এখন মনে হচ্ছে এই বিষয়ে পড়াশোনা করাটাই ভুল হয়েছে।’

শিক্ষানবিশ আইনজীবী আবদুল মোবিন প্রিতুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বার কাউন্সিল আমাদের শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জীবন নিয়ে খেলা খেলছে।

গত চার মাসে নানা কর্মসূচিতে আইন মন্ত্রণালয় ও বার কাউন্সিলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা

 

‘ডাক্তারি পাস করে একজন ব্যক্তি ডাক্তার হতে পারছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারছেন। অথচ আইন পাস করেও আমরা আইনজীবী হতে পারছি না। কোনো কোম্পানির আইনি পরামর্শক হিসেবেও যোগদান করতে পারছি না।’

আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থী শামীমুর রেজা রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উপায়ান্ত না দেখে এই কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু এতেও তারা গা করছে না।’

অনশনকারীদের অভিযোগ, আদালতে নতুন আইনজীবী যুক্ত হলে সিনিয়ররা আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এই ভয় থেকেই তাদের নিবন্ধনের সুযোগই দেয়া হচ্ছে না।

বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তির জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কারী এ কে মাহমুদ বলেন, ‘গত চার বছরে বার কাউন্সিল একটা পরীক্ষাও শেষ করতে পারল না। বছরে পাঁচ হাজার করে অন্তর্ভুক্ত হলে অন্তত ২০ হাজার ছেলে-মেয়ের আয়ের সংস্থান হতো।’

নিয়মিত পরীক্ষা না হওয়ায় চলতি বছর এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা হয়ে যায় ঢাউস, প্রায় ৪৭ হাজার। এদের মধ্যে পাস করেছেন আট হাজার ৭৬৪ জন। বাকি ৪০ হাজার।

প্রতি বছর যুক্ত হওয়া নতুন মুখ আগামীবার কবে পরীক্ষায় বসবে, সেটা পুরোপুরি অনিশ্চিত। কারণ করোনাকালে লিখিত, মৌখিক পরীক্ষাই শেষ হচ্ছে না। পরের পরীক্ষা নিয়ে ভাবারও সুযোগ নেই।

এ কে মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো পরীক্ষা না দিয়ে নিবন্ধন চাইছি না। করোনার কারণে এবার বার্ষিক পরীক্ষা এমনকি এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি।

‘আমরা কেবল বলছি, লিখিত না নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা হোক। যত জনকে খুশি নিবন্ধন দিক। আর পরের পরীক্ষাগুলো সময়মতো হোক। এই দাবি না মানার তো কোনো যুক্তি নেই।’

কেন পরীক্ষা হয় না জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা গ্রহণে সময়ক্ষেপণের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। দারুল ইহসানসহ কিছু ভুঁইফোঁড় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যেখান থেকে আইন পাসের সনদ নেওয়া হতো। তাদের রিটের পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত কিছু গাইডলাইন দিয়ে দেয়, যে কারণে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা গ্রহণে একটা গ্যাপ তৈরি হয়।

‘পরবর্তী সময়ে আমরা যখন নির্বাচিত হয়ে আসি, তখন একটা ভাইভা নেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এমসিকিউ পরীক্ষা হয়েছে। এরপর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও লিখিত পরীক্ষা গহণ করা সম্ভব হয়নি।’

বর্তমানে এমসিকিউ, লিখিত ও মৌলিক পরীক্ষা নেয়া হলেও এখন যারা বার কাউন্সিলের নেতৃত্বে আছেন, তাদের কাউকে তিনটি ধাপ পার হতে হয়নি। তখন কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে আইনজীবী সনদ দেয়া হতো।

২০১০ সালের আগে বার কাউন্সিলে প্রতি বছর কম করে হলেও একটি করে পরীক্ষা হতো। ২০১০ সাল থেকে সেশন জট শুরু হয়। এরপর থেকে ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে কেবল পরীক্ষা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর