বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোস্তাফিজ হত্যা: বিপজ্জনক সিআরপি সড়ক

  •    
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ১৬:১৮

হাসপাতাল রোড বলে রোগী আসে রাতেও। এই সুযোগ নেয় ছিনতাইকারিরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তারা থানায় জানালেও প্রতিকার পাননি। তবে পুলিশের দাবি, তারা অভিযোগ পায়নি।

সাভারের সিআরপি সড়কের যে এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় হত্যার ভিডিও মিলেছে, সেখানে এর আগেও ছিনতাইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাননি। পুলিশও এলাকায় নজরদারি বাড়ায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

শনিবার ভোরে বাস থেকে নামার পর মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তাকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। পুরো ঘটনা ধরা পড়ে পাশের এক বাড়ির সিসি ক্যামেরায়।

শিমুলতলা-সিআরপি শাখা সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচল থাকে দিন রাত। শিমুলতলা স্ট্যান্ড থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনবার্সন কেন্দ্র-সিআরপির দূরত্ব সাতশ মিটারের মতো।

এখানে রোগী আসে দিন রাত। হাসপাতালের কর্মী ও এলাকার মানুষ তো রয়েছেই। কিন্তু এত ব্যস্ত সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আগে থেকেই।

মাঝে মধ্যেই এই সড়কে ছিনতাইয়ের তথ্য মেলে। ছিনতাইকারির ছুরি বেঁচে ফেরা আইনুর নিশাত রাজীব নিউজবাংলাকে জানান, তিনি সিআরপিতে ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। হাসপাতাল কোয়ার্টারেই থাকেন। গত ৬ আগস্ট ঈদের ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে একই এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন।

‘ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শিমুলতলা স্ট্যান্ডে বাস থেকে নামি। রিকশা না পেয়ে হাঁটা শুরু করি। কিছুক্ষণ পরই অটোরিকশা নিয়ে তিন-চার জন আসে। একজন অটোতেই থাকে। রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকা অবস্থায় তিন যুবক কাছে আসে। দুইজন আমার গলায় ও পেটে ছুরি ধরে। তারা সড়কের পাশেই থাকা করাত কলের কাছে নিয়ে যায়।

‘সেখানে রাখা কাঠের গুঁড়ির পাশেই তারা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে আমার মোবাইল, মানিব্যাগ ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়। এমনকি বাড়ি থেকে আনা কিছু কোরবানির মাংস ও খাবার পর্যন্ত নিয়ে যায় তারা। ছিনতাই শেষে অটোতে উঠে পাশের গলি দিয়ে সিটি সেন্টারের দিকে চলে যায়।’

পরদিন সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাজীব। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম। এ ঘটনার পর ১০-১৫ দিন আমার অনেক ভয় লাগতো। রাস্তায় এক সঙ্গে কয়েকজন ছেলেকে দেখলেই মনে হতো তারা ছুরি ধরে আছে। মেন্টালি ঘটনাটি ওভারকাম করতে আমার প্রায় এক মাস লেগেছে।’

নাইমুল ইসলাম নয়ন সিআরপির চট্টগ্রাম শাখায় এডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। দাফতরিক কাজে আসতে হয়ন সাভারে। তিনিও ওই সড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

নয়ন বলেন, ‘সাধারণত সকাল বেলা আমাদের মিটিংগুলোতে অ্যাটেন্ড করতে হয়। ভোরে ফজর আজানের কিছুটা সময় আগে শিমুলতলা পৌঁছাই। একটি রিকশা ঠিক করি। কিছু দূর যেতেই করাতকল এলাকায় দুইজন কিশোর রিকশা থামায়। তারা গেঞ্জি খুলে নিজেদের মুখ বেঁধে রেখেছিল। হাতে লম্বা দুটি ছুরি।’

আরও পড়ুন: মোস্তাফিজের এক বছরের সন্তানের কী হবে

‘ছিনতাইকারি বুঝতে পেরেই আমি নিজে থেকে মোবাইল দিয়ে দেই। এ সময় আরেক কিশোর আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি নিজেকে সিআরপির স্টাফ পরিচয় দিয়ে কাপড় রাখা ব্যাগটাও তাদের দেই। কিন্তু ওই কিশোর আমার পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ নেয়ার চেষ্টা করে। আমি নিজেই মানিব্যাগ বের করে দিতে যাই। হঠাৎ সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস তাদের বিপরীত পাশে সড়কে থেমে যায়। ওই গাড়িতে সম্ভবত ডিবি পুলিশ ছিল। গাড়ির দরজা খুলতেই ছিনতাইকারি কিশোরদল দ্রুত পালিয়ে যায়। তার কাপড়ের ব্যাগটিও ফেলে রেখে যায় তারা। এসময় মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন ছিনতাইকারিদের ধরতে গলিতে চলে যায়।’

ছিনতাইকারীর আঘাতে নিহত মোস্তাফিজুর রহমান 

ওই ঘটনার পর নয়ন আর রাত বা ভোরে কখনও সভার সিআরপিতে আসেননি।

সিআরপির ফিজিওথেরাপিস্ট জাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘শিমুলতলা-সিআরপি সড়কটিতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আগে থেকেই। রাত ১২টার পর এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে অনেক ভয় লাগে।’

আরও পড়ুন: ছিনতাইয়ের সময় হত্যার দৃশ্য সিসি ক্যামেরায়

জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে সিআরপি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও কেউ অভিযোগ করেনি ‘ ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ করা উচিত ছিল।’

মোস্তাফিজুরের খুনিদের ধরতে পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালাচ্ছে জানিয়ে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সন্দেহভাজনদের আটকের আশ্বাসও দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর