শেরপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী মাই সাহেবা জামে মসজিদের কাছেই শ্রী শ্রী মদন গোপাল মন্দিরের অবস্থান। দুই সম্প্রদায়ের আলাদা ধর্মীয় উপসনালয়।
মুসলিমরা নামাজ পড়েন মসজিদে। আর হিন্দুরা যান মন্দিরে। ধর্ম ভিন্ন হলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন কয়েকশ বছরের।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো কয়েকটি মসজিদ-মন্দির আছে পাশাপাশি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যেই চলছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
শহরের নয়ানী বাজারের মাছ হাটির একটি দ্বিতল ভবনের ওপরের অংশে রয়েছে মসজিদ। ঠিক তার পাশেই মন্দিরে চলছে দুর্গাপূজা। মন্দির থেকে ভেসে আসে ঢাকঢোল, উলু ও শঙ্খধ্বনি। সন্ধ্যায় হয় আরতি অনুষ্ঠান। তবে আজানের সময় নীরবতা বজায় রাখেন পূজারি, ভক্তরা।
নয়ানী বাজারের পূজারি প্রদীপ দে জানান, ‘মণ্ডপের পাশের মসজিদে আজান পড়লে, আমরা একটু বিরতি দেই। এরপর আবার শুরু হয় পূজা-অর্চনা। আমাদের মধ্যে ভ্রাতিত্বপূর্ণ এই সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।’
পাশেই নয়ানী বাজার মা ভবতারা মন্দির। এখানেও চলছে দুর্গাপূজা। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ দূরে থাক, স্থানীয় মুসলিম নরনারীরা প্রতিবেশী হিন্দুদের পূজা উদযাপনে সহায়তা করছেন। অনেকেই প্রতিমা দেখতে যান পূজামণ্ডপে। উপভোগ করেন সন্ধ্যা আরতি।
স্থানীয় বাসিন্দা মুনসর আলী জানান, এখানে সবাই মিলেমিশে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালন করছে। তাদের বাপ-দাদারও এমনটিই করেছেন। ছোটবেলা থেকেই পূজা দেখতে যান মনসুর। আবার ঈদে কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন হিন্দু প্রতিবেশীরা।
মদন গোপাল মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা আমাদের পূজা করছি, আর মুসলিমরা তাদের ধর্ম পালন করছে। আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
মাই সাহেবা জামে মসজিদের ইমাম মো. মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, 'হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এই মসজিদে দান করেন। নানা সমস্যায় আমার কাছে দোয়া চাইতে আসেন। ধর্ম নিয়ে এখানে কোনো বাড়াবাড়ি নেই।'
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত কুমার দে ভানু জানান, শেরপুর একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। এখানে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির নজির বহু বছরের।