শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। প্রতিদিন লাখ লাখ ঘন মিটার বালু তোলার ফলে হুমকিতে পড়েছে শত শত একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোসাইরহাট উপজেলার মেঘনা নদীর কোদালপুর থেকে জালালপুর পর্যন্ত চারটি খননযন্ত্র দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। পাশাপাশি নতুন আরও দুটি খননযন্ত্র বসানো হচ্ছে।
অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু শতাধিক বাল্কহেডে চলে যাচ্ছে শরীয়তপুরসহ আশপাশের চাঁদপুর, বরিশাল ও মাদারীপুর জেলায়। একেকটি বাল্কহেডে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার ঘনফুট বালু বহন করা হয়।
বালু খননে ব্যবহৃত একটি ড্রেজারের শ্রমিক মো. মোতালেব নিউজবাংলাকে বলেন, 'প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু তুলতে হয়, তা না হলে প্রশাসন আমাদের ধরে নিয়ে যায়।'
বালু তোলার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে জানতে চাইলে আরেক ড্রেজিং শ্রমিক কাকন মিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতা খবির খাঁ, কাঞ্চন সরদার, বাবু সরদার, সুজন দেওয়ানসহ আরও কয়েকজন আছেন।'
এ ব্যাপারে কোদালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খবির খাঁ'র সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, 'আমার একটি ড্রেজার আছে। অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করছি। অনুমোদন না পেলে বালু তোলা বন্ধ করে দেব। তবে আমি সব ড্রেজারের নেতৃত্ব দিচ্ছি এটা সত্যি নয়। প্রত্যেকেই তার নিজ দায়িত্বে এগুলো চালাচ্ছে।'
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলন চক্রের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। এ কারণে নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরজালালপুর গ্রামের এক প্রবীণ নিউজবাংলাকে বলেন, 'জীবনে অনেকবার নদীতে সর্বস্ব হারিয়েছি। এখন নতুন করে ভয় দেখা দিয়েছে। নদীর গভীর থেকে এভাবে বালু তুললে বর্ষায় আমরা টিকতে পারব না।'
অবাধে বালু তোলার ঝুঁকি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডও (পাউবো) সতর্ক করেছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, নদী থেকে বালু তোলার আগে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। নকশা ছাড়া বালু তুললে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের পাশাপাশি নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, 'অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। কয়েকবার আমরা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এমন অবৈধ কাজ আবারও কেউ করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।'
প্রশাসনকে 'ম্যানেজ করে' বালু তোলার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটা একটি কথার কথা। এর কোনো ভিত্তি নেই।'