অর্ধশত বছর যে আঙিনায় কাটিয়েছেন, সেখান থেকে লাশবাহী গাড়িতে করে শেষ বিদায় নিয়েছেন ‘আইনের বাতিঘর’ খ্যাত ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে তার শেষ জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আইনজীবী সহকর্মীরা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে দুপুর দুইটা ২০ মিনিটে জানাজা শেষে রফিক-উল হককে নেয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে বেলা তিনটায় স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
জানাজায় অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আইন অঙ্গনের আজ অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আগামী ৫০ বছরেও এ ক্ষতি পূরণ হবে কি না, কারো জানা নেই।
‘সকলের শ্রদ্ধেয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইন অঙ্গনের নক্ষত্র বিদায় নিলেন। আইন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।’
আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। সব ছাপিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সাহসিকতার জন্য আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
সেনাসমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময় যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে, তখন তাদের জন্য সাহসী ভূমিকা নিয়ে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এ কারণে ‘দুই নেত্রীর আইনজীবী’ আখ্যাও পান।
বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইন অঙ্গনে যেভাবে তিনি লড়েছেন, একইভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ ছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে তার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেও তিনি কাজ করেছেন। মাঝে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
মেয়র ফজলে নুর তাপস বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হলো, যখন কোনো আইনজীবী সেই মামলা নিতে চাচ্ছিলেন না, তখন একমাত্র ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছিলেন, আমি জাতির পিতার কন্যার মামলা নিয়ে লড়ব। তখন তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বলেই গণতন্ত্র আবার পুনরুদ্ধার হয়েছে।’
এসময় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জীবন ও কর্মকে মূল্যায়নের আহ্বানও জানান মেয়র তাপস।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সারা জীবন তিনি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে লড়াই করেছেন।’
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তার অর্জিত অর্থ সম্পদও সঞ্চিত না করে বিলিয়ে দিয়েছেন। হাসপাতালসহ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় দান করেছেন তার সব অর্থ।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক (৮৫) শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে মারা যান। সেখানে পৌনে ১১টায় প্রথম জানাজা হয়। এরপর তাকে পল্টনের বাসভবনে নেয়া হয়।
জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তৃতীয় ও শেষ জানাজার পর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।