১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে ছুরি চালিয়েছে ছিনতাইকারী। যুবকের প্রাণ যাওয়ার সঙ্গে ধূলিসাৎ হয়েছে দুটি পরিবারের স্বপ্ন।
ভোরে সাভারে নিহত মোস্তাফিজুরের এক বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। থাকে রাজশাহীর দুর্গাপুরে।
নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম মোস্তাফিজের। পড়াশোনা করতে হয়েছে সংগ্রাম করে। এক বছর আগের পাওয়া চাকরি নিজের পাশাপাশি তার বাবার মুখে এনে দিয়েছিল এক চিলতে হাসি। সংসার চালানোর ভার নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ।
মোস্তাফিজের নিজের পরিবার, তার বাবার সংসারে এখন কান্নার পাশাপাশি রাজ্যের দুশ্চিন্তা। কে চালাবে সংসার?
বাবা মজিবুর রহমানের দুই ছেলে। বড় ছেলে হারুন অর রশিদ কৃষক। আয় করেন সামান্যই। ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর তার জীবনে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছিলেন।
ছেলেকে হত্যার খবর আসার পর রাজশাহীর দুর্গাপুরের বাসায় মাতম করে কাঁদছিলেন মজিবর। কীভাবে সংসার চালাবেন, এক বছরের নাতিকে কীভাবে বড় করবেন, বারবার বলছিলেন সে কথা।
২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সাভারের গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন তিনি।
ততদিনে স্ত্রী খাদিজা বেগম ছেলের মা হয়েছেন। একা একা সামলাতে পারবেন না বলে আনেননি ঢাকায়। ছেলে এখন কিছুটা বড় হয়েছে। স্ত্রীও সামলাতে পারবেন সব।
তাই কাছে পেতে চান প্রিয়তমা স্ত্রীকে, বুকে জড়িয়ে রাখতে চান সন্তানকে। বাসা ভাড়া নিলেন। স্ত্রী-সন্তানকে আনতে গেলেন রাজশাহী। কিন্তু ছেলের জ্বরের কারণে আনা হয়নি।
শনিবার সকালে সাভারের সিআরপি সড়কের কাছে বাস থেকে নামার পর ছিনতাইকারীরা ঘিরে ধরে মোস্তাফিজকে। ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকার কথা চিন্তা করে দৌড় দিয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি তিন জনের সঙ্গে। তাকে ধরে বুকে ছুরি মারা হয়। সেখানেই প্রাণ হারান মোস্তাফিজ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর বাড়ি থেকে রওনা দেয়ার আগে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া চেয়েছিলেন এই তরুণ। বলেছিলেন গন্তব্যে পৌঁছেই ফোন করবেন। কিন্তু সে ফোন আর যায়নি।
দুপুরে মোস্তাফিজের মৃত্যুর খবর আসে দুর্গাপুরের নওয়াপাড়ার বাড়িতে। স্ত্রী খাদিজা বেগমের কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
স্বজনরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে যান মোস্তাফিজ। সাড়ে সাতটার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার।
এক স্বজন বলেন, ‘খাদিজাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ভাড়া বাসাও ঠিক করেছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু ছেলে মুসার কয়েক দিন ধরে জ্বর। তাই একসঙ্গে আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।’
মোস্তাফিজের বাবা মজিবুর রহমান বলছিলেন, তার ছেলে খুবই সহজ সরল ও শান্ত প্রকৃতির। বাড়িতে আসলে নওয়াপাড়া মসজিদের ইমামতি করতেন। এলাকায় কারও মৃত্যু হলে জানাজা পড়াতেন মোস্তাফিজ।
অভাবের সংসারে পড়ালেখা করে হাল ধরেছিল ও; কিন্তু দুর্বৃত্তরা বাঁচতে দিল না- এ কথা বলে বারবার আক্ষেপ করছিলেন মজিবুর।
মোস্তাফিজরা দুই ভাই। বড় ভাই হারুণ অর রশিদ কৃষক। বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণপোষণের পাশাপাশি পরিবারের দেখভাল করতেন ছোট মোস্তাফিজই।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, শনিবার ভোরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ সিআরপি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর জানায় একজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কের ধারে যুবকের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। মরদেহের পাশে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হয়।ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে পুরো ঘটনাটি। ফুটেজটি নিয়েও এসেছে পুলিশ।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়েদ বলেন, ‘আমরা মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ করে রেখেছি। নিহতের স্বজনদের ডেকেছি। তারা এলে মামলা নথিভুক্ত করব।
‘ফুটেজ দেখে খুনিদেরকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি অচিরেই তাদের ধরে ফেলব।’
মোস্তাফিজ পড়তেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই হত্যার খবর পৌঁছালে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে জড়ো হন তার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।