দূষণ, ইঞ্জিন চালিত নৌকার আঘাত, হত্যা ও জালে আটকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত হালদা নদীতে মারা গেছে অন্তত ২৭টি ডলফিন। এই পরিস্থিতিতে হালদায় ডলফিনের অস্তিত্ব শঙ্কায় গবেষকেরা।
হালদা নদীর গাঙ্গেয় (প্ল্যাটেনিস্টা গ্যানজেটিকা Platanista gangetica) প্রজাতির ডলফিনকে ইতোমধ্যে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।
শনিবার দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিঠা পানির ডলফিন দিবস। দিনটি উপলক্ষে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা।
২০১৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি ও বাংলাদেশ বনবিভাগের সমীক্ষায় হালদায় মাত্র ৪৫টি ডলফিন পাওয়া যায়।
তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, এ নদীতে ডলফিনের সংখ্যা ১৭০টি।
হালদায় ডলফিনের মৃত্যুর কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকেরা।
তারা জানান, হালদার তীরে বাঁধ নির্মাণ চলছে, পাশাপাশি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনও থেমে নেই। এজন্য নদীতে চলছে ড্রেজারসহ বিভিন্ন নৌযান। মূলত এসব নৌযানের আঘাতে বেশিরভাগ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন বছরে হালদায় ২৭টি ডলফিন মারা গেছে। এরমধ্যে একটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অন্য ডলফিনগুলোও বিভিন্ন আঘাতে মারা গেছে।’
ডলফিনের মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরার জন্য জেলেদের ফেলা জালে অনেক সময় ডলফিন জড়িয়ে যায়। তখন জাল রক্ষায় ডলফিনগুলো হত্যা করে জেলেরা।’
‘এ ছাড়া ডলফিনের শরীরের তেল নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। অনেকে তেলের লোভে নৃশংসভাবে ডলফিন হত্যা করছে।’
মূলত দক্ষিণ এশিয়ার গঙ্গা ও এর শাখা নদীতে মিঠা পানির এই ডলফিন দেখা যায়। এক সময় দেশের অনেক নদীতে এই প্রজাতির ডলফিন দেখা মিললেও এখন সেই দৃশ্য বিরল।
নদীতে ডলফিন কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘ডলফিন হচ্ছে উপকূলীয় প্রতিবেশের প্রহরী। নদীতে দূষণ কেমন সেটি ডলফিনের সংখ্যা ও অবস্থা দেখে বোঝা যায়।’
এ ছাড়া ডলফিন নদীর অসুস্থ ও দুর্বল প্রাণীকে শিকার করে। এর ফলে নদীর মাছের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে না।
গত ১৯ মে হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্য, মা মাছ ও ডলফিন রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
কমিটির সদস্য ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। একাধিক সভা হয়েছে। কিছু কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করা হয়েছে।
কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আছে হালদায় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল ও বালু উত্তোলন বন্ধ এবং ডলফিন হত্যা রোধে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি।