রাজধানীতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের পর থেকে বন্ধ আছে ক্লাবে ক্লাবে গড়ে ওঠা বড় ক্যাসিনোগুলো। তবে অনলাইনে ক্যাসিনো খেলা বন্ধ করতে পারছে না সরকার।
জুয়ার আসর চলে এমন অনলাইন ক্যাসিনোর ওয়েবসাইট বা লিংক একের পর এক বন্ধের চেষ্টাতেও কাজ হচ্ছে না। অনুমোদনবিহীন গেটওয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া সাইট বা নতুন সাইট ব্রাউজ করে জুয়া খেলা চলছে।
সাইবার পুলিশ বলছে, অনলাইন ক্যাসিনোর সাইটগুলোর ডোমেইন দেশের বাইরে এবং নির্ধারিত সময় পর পর এসব সাইটের আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণকারীরা। যে কারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে অনলাইন ক্যাসিনোর কিছু সাইট বন্ধ করা হলেও ফল মিলছে না।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা নিউজবাংলাকে বলেন, সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু সাইট বন্ধ করেছে। কিন্তু কিছু গেটওয়ে আছে, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকারের কাছে নেই। অনলাইন ক্যাসিনো বন্ধ করতে না পারার এটা একটা কারণ।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে কেউ যাতে কোনো সাইটে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ন্যাশনাল গেটওয়েতে আপডেটেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মডেলিং ল্যাঙ্গুয়েজ (এআইএমএল) থাকা প্রয়োজন। সেটা না থাকায় মানুষ প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট সাইট ব্রাউজ করতে পারছে।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াং ম্যান্স ক্লাবে অভিযানের মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। একে একে ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, আবাহনী ক্লাব, মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এসব ক্লাব থেকে কয়েক কোটি টাকার ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে দেশের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে জুয়া খেলা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
কিন্তু ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো খেলা বন্ধ হলেও অনলাইনে চলছেই।
২০১০ সাল থেকে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নিচ্ছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, সাইট ব্লক করলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। প্রক্সি ব্রাউজারের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করা যায়।
বাংলাদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনো খেলতে হলে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং টাকা লেনদেন নিয়ে কিছু জটিলতা হয় বলে জানান তিনি। তবে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং টাকা লেনদেনের জন্য তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একটি গ্রুপ কাজ করে।
অনলাইন ক্যাসিনো প্রতিরোধে র্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি জানান, অনলাইন ক্যাসিনোর শতাধিক সাইট ও অ্যাপস চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি দেয়া হবে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমরা ৩০টির বেশি ক্যাসিনো সাইট বন্ধ করেছি। এ ধরনের অন্য সাইট নজরে এলেই আমরা বন্ধের ব্যবস্থা নিচ্ছি।'