নওগাঁর ধামইরহাটের সিরাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পাস। এরপর চাকরির চেষ্টা, জুটেনি। পরে স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হওয়ার। ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। এক বছরের জন্য একটি পুকুর ইজারা নেন। প্রায় ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
আর কিছুদিন পর মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে পুকুরে বিষ ঢেলে দেয়। মাছ মরে ভেসে ওঠে। সিরাজুলের স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। কীভাবে ঋণের টাকা শোধ করবেন, এই দুশ্চিন্তা তাকে তাড়া করছে।
সিরাজুলের বাড়ি ধামইরহাট উপজেলার চৌঘাট গ্রামে। সেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর চাকরির চেষ্টা করেন, হয়নি। পরে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
এক বছর আগে খালাত ভাই, ভাগ্নে ও তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মাছচাষের পরিকল্পনা করেন। চার জন মিলে ২৫ হাজার টাকায় চার একরের একটি পুকুর এক বছরের জন্য ইজারা নেন। পরবর্তী সময়ে খালাত ভাই ও ভাগ্নে তাদের অংশ বিক্রি করে দেন।
ইজারার টাকা বাদ দিয়ে সেখানে মাছ ও খাবার বাবদ প্রায় ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন সিরাজুল। পুকুরে রুই, মৃগেলসহ নানা প্রজাতির মাছ বড় হয়। একেকটির ওজন প্রায় দেড় কেজি হয়। কিন্তু সোমবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বত্তরা পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে। পরদিন সকালে পুকুরের পানি শত শত মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখেন সিরাজুল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি শেষে নওগাঁয় মাছের খামার করেছেন সিরাজুল ইসলাম
এ ঘটনায় তিনি একই গ্রামের আজিজুল হক, সাহাবর হোসেন ও সাগরকে আসামি করে বুধবার রাতে মামলা করেন। রাতে আজিজুল ও সাগরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সিরাজুল নিউজবাংলাকে বলেন, তার স্ত্রী ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের সিনিয়র নার্স। স্ত্রীর জমানো টাকা ও ধারদেনা করে পুকুর ইজারা নিয়েছিলেন। পুকুরে অন্তত ৯০-১০০ মণ মাছ ছিল। ইতিমধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা এর আগে এই পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করেছিলেন। সেখানে তারা সফল হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে মালিক পুকুরটি খনন করেন। পুকুরটির আয়তন বৃদ্ধি হয়। এরপর আমরা পুকুরটি ইজারা নিয়েছি। আসামিরা পুকুরটি ইজারা নিতে না পারার ক্ষোভে পুকুরে বিষ দিয়ে আমার ক্ষতি করেছেন।’
ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মমিন বলেন, গ্রেফতার করা দুই জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।