রাতভর বৃষ্টি। সকালে নেই অফিস যাওয়ার তাড়া। ঘুম একটু লম্বাই দিয়েছেন নাহিদা খানম।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম ভাঙার পরও ব্যস্ততা নেই। আবহাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা। মেয়ে ঘুমাচ্ছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সোফায় বসে খানিকটা সময় কাটালেন।
মেয়ের ঘুম ভাঙে সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে। সেও ঘুমাল ১২টা অবধি।
- আরও পড়ুন: নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশে ভারী বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে দুই দিন ধরেই বৃষ্টি। শরতের শেষ দিকের গুমোট গরমের ভাপটা উধাও। এর মধ্যে আবার সাপ্তাহিক ছুটি। সদা ব্যস্ত গোটা শহরই আয়েশি। রাস্তা ফাঁকা, জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে মানুষ কম।
যারা বাইরে বেরিয়েছেন, তাদের বহুজনের পথচলাটা নির্বিঘ্ন হয়নি খুব একটা। নানা স্থানে সড়কে পানি জমে ব্যাঘাত ঘটেছে যান চলাচলে।
সিদ্ধেশ্বরী, বেইলিরোড, মোহম্মদপুর, মিরপুর, কল্যাণপুর, কুড়িল, বিশ্বরোড, পোস্তগোলা, জুরাইন, দোলাইপাড়, ওয়ারী, গুলিস্তান, বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় জমে পানি।
সকালে কাঁচাবাজারগুলোর আড়মোড়াও ভাঙছিল না। বিক্রেতারা বসেছিলেন ক্রেতার অপেক্ষায়।
মৌচাক এলাকায় সবজি বিক্রেতা ইয়াসিন বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন ধইরা এই অবস্থা, কালকেও কিছু বেচবার পারি নাই। সকাল থেকে সবজির ভ্যান নিয়া ঘুরতে পারি না। বৃষ্টির জন্য আলু, মরিচ আর শাক পইচ্যা যাইতেছে।’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপ: বরিশালে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
শ্যামবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মালেক সরকার বলেন, ‘অন্য দিন শুক্রবার এই সময় সব মাল বেইচ্যা শেষ কইরা ফেলতাম। কিন্তু সকাল থন কাস্টমার কম। বেচাকেনা নাই।’
আরেক ব্যবসায়ী খালেক বলেন, ‘এমনিতেই দাম বেশি, আবার বৃষ্টি। আইজ মাল আনছি কম। যদি এখন বেচবার না পারি, তাইলে খামু কী?’
বাজারে কদিন ধরেই দাম বেশি। বৃষ্টির মধ্যে খরচ বেশির কথা বলে বিক্রেতারা আরেকটু বেশি চাইছেন- জানাচ্ছিলেন শ্যামবাজারে বাজার করতে আসা মফিদুল হক।
বলেন, ‘ভোর থেকেই বৃষ্টি। শুক্রবার হয়াতে ভেবেছিলাম, একটু বাজার করব। কিন্তু যে পরিমাণ কাদা আর পানি তাতে বাজারে আসায় ভোগান্তি বেশি। এরপর বৃষ্টির অজুহাতে সব জিনিসের দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে।’
আড়তের চিত্র আবার উল্টো। গত রাতে কারওয়ানবাজারে যে দরে সবজি বিক্রি হচ্ছিল, সকালে পাইকারি ক্রেতার অভাবে দাম কমে যায়।
বৃষ্টিতে শ্রমজীবীদের চলাচলের ভোগান্তিও দেখা গেছে। বর্ষাতি, ছাতার অভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে গা ভিজে গেছে তাদের।
ভিজতে চান না বলে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন একদল রিকশাচালক। মহসিন মিয়া নামের একজন বলেন, ‘কোনো প্যাসেঞ্জার নাই। বেলা অর্ধেক শেষ। মাত্র একশ টাকা কামাই।’
ছুটির দিন, তার ওপর যাত্রী আরও কম, বাস চালক-শ্রমিকরাও খানিকটা জিরিয়ে নিতে চাইছেন। তাই বাসও যে খুব একটা আছে, এমন নয়। ফলে যারা বাসে করে চলতে চেয়েছেন, তাদের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়েছে স্বাভাবিক দিনের তুলনায়।
অনেককে হেঁটেই নিজ গন্তব্যের পথে যেতে দেখা যায়।
দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলো করোনাকালে এমনিতেই ফাঁকা। এই আবহাওয়া যেন আরেক কাঁটা। এর মধ্যে যারা এসেছে ‘মায়ের’ আরাধনায়, তারাও পড়েন ভোগান্তিতে।
বৃষ্টির জন্য বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভারী বৃষ্টি মাথায় নদী পারাপার করছে ছোট ছোট নৌকা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, শুক্রবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। আর সকাল ছয়টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার। শনিবার দুপুরের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। তার আগে থেমে থেমে হবে বৃষ্টি।
২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৩.৪।
তবে বৃষ্টিপাতের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও কমবে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ২৫.৭ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২৩.৪।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
নিম্নচাপের কারণে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে ।